দীর্ঘ পাঁচ বছর শনিবার বান্দরবানে জেলা ছাত্রলীগের সন্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে সম্মেলন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। এছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ছাড়া কেন্দ্রীয়, জেলা আওয়ামীলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এ সন্মেলনকে ঘিরে বান্দরবানে জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী বোমাং রাজার মাঠে ২০১০ সালের ১৪ মার্চ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ করা হয়। সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তৌহিদুর রহমান চৌধুরী রাশেদ। সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাশ। ১০১ সদস্যের নতুন এই কমিটিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অনুমোদন দেয় ২৮ মে। কমিটির মেয়াদকাল দুই বছর শেষ হয়ে আরও তিনটি বছর অতিবাহিত হয়েছে। গত তিন বছরে জেলা ছাত্রলীগ কমিটির বেশিরভাগ নেতাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদের নেতারা বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। বেশিরভাগ নেতা ঠিকাদারী কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। সংসার ও ঠিকাদারী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামো ঝিমিয়ে পড়ে।
৬ জুন শনিবার সম্মেলনকে নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের নিচের সারির তারুণ্য দীপ্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে দৌড় ঝাপ শুরু হয়। এবার সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা ছাত্রলীগ কমিটির উপ-ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউল করিম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হোসেন বাবলু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আহসানুল আলম রুমু, সদস্য কাজী আশরাফ হোসেন আশু। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, জেলা ছাত্রলীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম হারুন, উপ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জনি সুশীল, সদস্য মো: কাউছার সোহাগ, সদস্য ইমরান উদ্দিন বাবু, তৌহিদুল ইসলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, শনিবার জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তাদের পক্ষে নেতাকর্মীরা প্রথম প্রথম মিছিল, মিটিং করে রাজপথ সরগরম করে রাখেন। যখন তারা ভিতরের গোপন খবর জানতে পেরেছেন নির্বাচন দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাছাই করে নতুন নেতা নির্ধারণ করে ঘোষণা দেওয়া হবে সম্মেলনে। এরপর নেতাকর্মীরা রাজপথে মিছিল-শ্লোগান দেওয়া থেকে সরে আসেন। নতুন নেতা নির্ধারণের বিষয়ে আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জেলার সাংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং’য়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে জেলা ছাত্রলীগ কমিটির নতুন নেতা কে হচ্ছেন? সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর পক্ষে গোপনে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতা চাইছেন তাদের অনুসারী ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে আসুক।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মো: কাউছার সোহাগ বলেন, নির্বাচন দিয়ে না বাছাই করে নেতা নির্ধারণ করা হবে জানি না। এটা জানি যে, নেতা হওয়ার যোগ্যতা প্রমান দিতে এখন সময় এসেছে। বাছাই না করে নির্বাচন দিয়ে নেতা নির্ধারণ করা হলে নেতার মূল্যায়ন হয়।
সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আহসানুল আলম রুমু বলেন, আমরা এখনো ছাত্র। আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় টাকা খরচ করে নেতা হওয়া। দুর্গম-প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো প্রচুর টাকা ও সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। এই কারণে নির্বাচন না দিয়ে বাছাই করে নির্ধারণ করা হলে ছাত্ররা উপকৃত হবে।
লামা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল আল মামুন বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবাই চাই। এখন বিষয়টি আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের (প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং) উপর নির্ভর করছে। তিনি যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই হবে যুগপযোগী। আলীকদম উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার জিহাদ বলেন, আশা ও প্রত্যাশা আমাদের অনেক। কতটুকু পূরণ হবে জানি না। আমরা চাই যোগ্য নেতৃত্ব।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মিডিয়া উপ কমিটির আহ্বয়ক বাসু দাশ বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিসহ নেতৃবৃন্দরা ও জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তৌহিদুর রহমান চৌধুরী রাশেদ বলেন, প্রার্থীরা যদি একই মতে ও সমঝোতায় পৌছায় তাহলে তারা যেভাবে চাই সেইভাবে হবে। সম্মেলনের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সবই ভিত্তিহীন। তাছাড়া নির্বাচন করতে গেলে একজন যোগ্য ছাত্র নেতার পক্ষে টাকা পঁয়সা খরচ করে নেতৃত্বে আসা অনেক জটিল ব্যাপার।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.