কল্পনা চাকমার অহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে শুক্রবার রাঙামাটিতে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরনের ১৯ বছর উপলক্ষে সকালের দিকে জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সভাপতি জড়িতা চাকমা। বক্তব্যে দেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, নারী নেত্রী ওয়াইসিং প্রু মারমা, জনসংহতি সমিতির নেতা শরৎ জ্যোতি চাকমা ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক জুয়েল চাকমা। এর আগে একটি বিক্ষোভ-মিছিল জনসংহতি সমিতির জেলা কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে বনরুপা পেট্রোল পাম্প পর্ষন্ত ঘুওে গিয়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,১৯ বছরেও সরকার কল্পনা চাকমার অপহরনের কোন হদিশ দিতে পারেনি এবং অভিযুক্ত চিহিৃত অপহরনকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়া হয়নি। রাষ্ট্র লজ্জাজনকভাবে এখনও কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার যথাযথ বিচার নিশ্চিত করনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। ১৯ বছর ধওে কল্পনা চাকমার অপহরনকারীদের বিচার না হওয়া এমনকি গ্রেফতার না করা দেশের বিচারবিহীনতার অপসংস্কৃতিকেই অত্যন্ত প্রকটভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরন ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি বক্তারা পার্বত্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান, পার্বত্যাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন,শান্তি এবং নারী সমাজের নিরাপত্তা ও অগ্রগতির স্বার্থে অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নেরও দাবি জানোনো হয় প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে।
জনসংহতি সমিতির নেতা শক্তিপদ ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চুক্তির ১৭ বছরেও মৌলিক বিষয়গুলো সরকার বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। বরং সরকার চুক্তি লংঘন করে নানা কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদকে ক্ষমতা দেয়নি। পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পার্বত ভুমি কমিশন। এ ভূমি কমিশন কার্যকর না করে সরকার দাবী করে যে চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে তা কোন দিন বলা যাবে না পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে।
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে রোডম্যাপের ঘোষনার দাবীতে জনসংহতি সমিতির অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষনার কথা স্মরণ করে দিয়ে তিনি আরও বলেন, চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষনা দেয়ার দাবি জানিয়ে আসলেও সরকার কাছে এখনো কোন কিছুই ঘোষনা করেনি। তাই অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে যদি অফিসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়ে তার জন্য দায়ী থাকবে সরকার। তিনি অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচিতে সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য,১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাইল্যাঘোনা গ্রাম থেকে অজ্ঞাতনামা দৃস্কৃতকারীরা অপহরন করে নিয়ে যায়। অবশ্যই কল্পনা চাকমার পরিবার ও তার সংগঠনের পক্ষ থেকে সেনা বাহিনীর লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসকে দায়ী করেছিল। সরকার জনমতের চাপের মুখে একটি বিচার বিভাগীয় কমিটির গঠন করলেও রিপোর্ট আজও প্রকাশিত হয়নি। অবশেষে এক যুগেরও অধিক সময়ের পর ২০১০ সালের ২১ মে পুলিশ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করার অপহৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে না রাজি জানিয়ে মামলার পুনঃতদন্তের জন্য আদালতের কাছে দাবি জানান। আদালত পুনতদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিলে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। তবে আদালত সিআইডির দেয়া প্রতিবেদনটি যথাযথ হয়নি তা প্রত্যাখান করে অধিকতর তদন্তে জেলা পুলিশ সুপারকে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয়ার নিদের্শ দেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.