পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) অভিযোগ করে বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ পরাধীনতার শৃংখলায় আবদ্ধ। পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে শাসন ব্যবস্থা দীর্ঘ দুশত বছরের অধিক ধরে উপনেবিশিক কায়দায় শাসিত হয়ে আসছে। যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার লক্ষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের আইনকে কার্যকর না করে উপনেবিশিক কায়দায় ব্রিটিশের ১৯০০ সালের শাসনবিধিকে বজায় রেখে শাসক গোষ্ঠী জুম্ম জনগনের চিরতরে বিলুপ্তির জন্য যড়ষন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জুম্ম জনগনের আত্বনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য অধিকতরভাবে লড়াই-সংগ্রামে চাপিয়ে পড়ার জন্য যুব সমাজ থেকে সকলকে আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সন্মেলনে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সন্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সভাপতি সুনির্মল দেওয়ানের সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারুখ হোসেন, যুব মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক কায়সার আলম, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সুপ্রভা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য উদয়ন ত্রিপুরা ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদেরকেন্দ্রীয় সভাপতি বাচ্চু চাকমা। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক পাপলু বিকাশ চাকমা। সন্মেলনের শুরুতে সন্তু লারমা জাতীয় পাতাকা ও দলীয় পাতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সন্মেলনের উদ্ধোধন করেন। দিন ব্যাপী সন্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা থেকে তিন শতাধিক নেতাকর্মী ও পর্যবেক্ষক অংশ নেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা তার বক্তব্যে আরও বলেন, ৮০ দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চার লক্ষ পূর্নবাসিত বাঙালীকে আনা হয়েছে অমুসলিম অঞ্চলকে মুসলিম অঞ্চলে পরিণত করার জন্য। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর অপারেশন উত্তোরণ নামের সেনা শাসন অব্যবাহত রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় সাধারন প্রশাসন থেকে আইন-শৃংখলা, উন্নয়নসহ সার্বিক ক্ষেত্রে শাসন ব্যবস্থায় কেন সেনা বাহিনী ভূমিকা থাকবে। ১৯০০সালের শাসন অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রতিদিন যে সমস্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন তা পার্বত্য চুক্তি বিরোধী এবং জুম্মজনগনের স্বার্থের পরিপন্থী।
উন্নয়ন নামে জুম্মগণকে জোর করে মেডিকেল কলেজ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে উল্লেখ তিনি বলেন, পুলিশ ও সেনা বাহিনীর প্রহরা দিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে কিছু ব্যক্তির স্বার্থকে হাসিল করতে রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ পরিচালনা করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৪টি ভাষাভাষি জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব বিপন্ন করার জন্য এসমস্ত কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে আজ পর্ষন্ত পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য নানান আঙ্গিকে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে। ১৯১৫সালে পার্বত্য যুব সমাজ বিপ্লবী উদ্যোগ গ্রহন করেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সসমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাসহ জুম্ম সমাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তারা যে প্রতিজ্ঞা করেছিল একটা সংগঠন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে। আজকের শত বছর পর ২০১৫সালে এসে সেই একই অনুভুতি নিয়ে যুব সমাজকে সংগ্রামের জন্য আহ্বান জানাতে হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজ ব্যবস্থা বিভক্তির সমাজ ব্যবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমাজ ব্যবস্থা জাতিগত, বর্নগত, অর্থনৈতিকগত, লিঙ্গগত সংস্কৃতিগতসহ নানান ধরনের বৈষম্য বিরাজমান রয়েছে। মানুষে মানুষের মধ্যে রয়েছে বৈষম্য। তাই আজকের এই সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়েছে বলে বলা যেতে পারে না।
আত্ননিয়ন্ত্রাধিকার আন্দোলন তথা পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন আন্দোলনে প্রতিপক্ষকে চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে যারা অধিকার দিতে চাইছে না, যারা আন্দোলনে প্রতিপক্ষ হয়ে পাঞ্জা লড়ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকারহারা মানুষের ধ্বংস ও বিলুপ্তি করার জন্য যারা যড়ষন্ত্রে জড়িত রয়েছে তাদেরকে যথাযথভাবে চিহিৃত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে জুম্ম জাতির ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা ও উদ্ধার করতে হবে।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের এক শ্রেনীর জুম্ম শাসক গোষ্ঠীর লেজুড়ে দালালি ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে আওয়ামীলীগ,বিএনপি,জাতীয় পার্টি, সম অধিকারসহ ইত্যাদি দলে যুক্ত হয়ে রাজনীতি করছে। আজকে যারা শাসকগোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হয়ে জুম্ম জনগণের অস্তিত্বকে ধ্বংস করতে চাই সেই সব জুম্ম দালালদের যথাযথ চিহিৃত করা অবশ্যই জরুরী বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এছাড়া শাসকগোষ্ঠীার সাথে যুক্ত রয়েছে সশস্ত্র ইউপিডিএফ, সংস্কারপন্থী। যুক্ত রয়েছে সেনা বাহিনীর নেতৃত্ব, পুলিশ বাহিনী, আমলা, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাসহ যারা শাসন ব্যবস্থায় যারা জড়িত।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.