পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের আঠারো বছর অতিবাহিত হলেও চুক্তিটি এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তা অবিলম্বে পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন(সিএইচটি কমিশন)।
মঙ্গলবার গণ মাধ্যমে পাঠানো পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের কো চেয়ার এরিক এভিব্যুরি, সুলতানা কামাল, এলসা স্টামাতৌপৌলো-এর যৌথ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এ আহ্বান জানানো হয়।
প্রেস বার্তায় দাবী করা হয়, পার্বত্য চুক্তির উল্লেখযোগ্য অবাস্তবায়িত মৌলিক বিষয়ের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনে সংশোধনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করা ও কমিশনকে অকার্যকর করে রাখা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন কার্যকর না করা, আইন শৃঙ্খলা, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন, পরিবেশ, স্থানীয় পুলিশ নিয়োগ ইত্যাদি বিষয় পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর না করা, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের স্ব স্ব জায়গা জমিতে পুনর্বাসনের ব্যর্থতা,
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার না করা,পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার জন্য জনবসতিপূর্ণ এলাকা অধিগ্রহণ করা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা পাহাড়ে বেপরোয়া ভূমি দখল করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
প্রেস বার্তায় আরও বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে ব্যর্থতা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ এর বিরোধাত্মক ধারাগুলো সংশোধন করে এ আইনকে কার্যকর করে পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
দীর্ঘ আলোচনার পর ২০১৩ সালে এ আইনের ১৩টি বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনের বিষয়ে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি একমত হয়।
কিন্তু এ আইনটি সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদে এখনো উত্থাপন করা হয়নি। তাই জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশনে এ আইনটি উত্থাপন করে পাস করার জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে প্রেস বার্তায়।
প্রেস বার্তায় স্বরাষ্ট্র ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক পরিপত্র বাতিলের দাবি জানিয়ে বলা হয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৩ অধিশাখা থেকে যেসব অনুষ্ঠানে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেসব অনুষ্ঠানে জাতীয় অবকাঠামো (জাতীয় শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, ইঞ্জিনিয়ারস্র্ ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) ব্যবহার বা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের প্রতি অনুরূপ বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক সরকারি নির্দেশনা জারী করা হয়েছিল।
উক্ত নির্দেশনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি, সকল দেশী-বিদেশী ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহ সেখানকার পাহাড়িদের সাথে কথা বলা বা সভা করতে গেলে স্থানীয় প্রশাসন বা নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে কথা বলাসহ বিভিন্ন বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছিল। এসব অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক সরকারি নিদের্শনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
সাম্প্রদায়িক হামলাসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে প্রেস বার্তায় উল্লেখ করা হয়, অতীতে পাহাড়িদের ওপর যেসব সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার না হওয়ায় বারবার পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক অপারেশন পরিচালনা ও ধরপাকড়ের ফলে অনেক সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।
প্রেস বার্তায় এসব ঢালাও ধরপাকড় ও গ্রেপ্তার বন্ধ এবং সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হামলার ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানানো হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.