পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলী ও রাঙামাটির ৮ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে সম্মাননা জানানো হয়েছে।
বক্তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাক বাহিনীর হাতে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়েছে অনেক নিরীহ মানুষকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সেই সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা প্রকাশসহ বধ্য ভূমি চিহিৃত করে সংরক্ষনের উদ্যোগ গ্রহনের কথা জানান।
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সরক্ষন পরিষদের উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের কর্ণফুলী হল রুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদের ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, শহীদ আব্দুল আলীর কন্যা নাজমা আক্তার লিলি।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধা রণবিক্রম কিশোর ত্রিপুরা,প্রীতি কান্তি ত্রিপুরা, শহীদ শুক্করের ছোট ভাই এমদাদুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগ বক্তব্যে রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদের সদস্য সচিব সুনীল কান্তি দে। অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সহ-সভাপতি মাহাবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে রাঙামাটির নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শুরুতে শহীদদের উদ্দেশ্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে রাঙামাটির ৯ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের সন্মানা ক্রেস প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীরা দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করেন।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলীর স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, এই অর্জন পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর। এই পদক পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছে। তিনি আরো বলেন, এখন সময় এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষনের। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আগামী প্রজন্মে কাছে তুলে ধরতে হবে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশসহ বধ্য ভুমি চিহ্নিত করে তা সংরক্ষন করার চেষ্টা চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে জাদুঘর স্থাপন করা হবে। যেখানে থাকবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলীসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত সামগ্রী।
দীপংকর তালুকদার বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য শহীদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করা হবে সড়ক, বিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং প্রকাশ করা হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসসমৃদ্ধ গ্রন্থ।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৪৫বছর পর হরেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনের উদযোগ অত্যন্ত জরুরী। কেননা দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সঠিক ইতিহাসের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। আর এজন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনের পাশাপাশি বধ্যভুমিও চিহ্নিত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে অনেক আগে এখন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রক্ষায় তা সংরক্ষনের জন্য স্বপক্ষের লোকজনদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীর কণ্যা নাজমা আক্তার তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে অত্যন্ত আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, তার বাবার প্রাপ্ত স্বাধীনতা পদকসহ সমস্ত কিছু অর্জন রাঙামাটিবাসীর। তিনি রাঙামাটি আব্দুল আলী একাডেমীর কাছে সবকিছু উৎসর্গ করে তার একটি শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য রাঙ্গামাটির বাসীর প্রতি আহ্বান। তার শেষ ইচ্ছা তার মৃত্যুর পর তাকে যেন শহীদ আবদুল আলী একাডেমীর একপ্রান্তে যাতে দাফন করা হয়। এসময় রাঙামাটির নাগরিক সমাজ এ সময় দাড়িঁয়ে তার এই ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.