রোববার খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বাবুছড়া ৫১ বিজিবি সদর দপ্তর অভিমুখে দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কমিটির পদযাত্রায় বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কমিটির সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এসময় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। স্পর্শকাতর স্থান সমূহে আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার দীঘিনালায় সকাল সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচীর ঘোষনা দিয়েছে ভূমিরক্ষা কমিটি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার সর্বত্র থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কমিটির নেতারা অভিযোগ করেছেন,রোববার দীঘিনালা সদর থেকে ভূমিরক্ষা কমিটি শান্তিপুর্নভাবে পদযাত্রাসহকারে বাবুছড়ায় ৫১ বিজিবি সদর দপ্তর অভিমুখে যাওয়ার সময় কারবারি টিলা নামক স্থানে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলা ও গুলি বর্ষণ করে। হামলায় ভূমিরক্ষা কমিটির ইন্দ্রমনি চাকমা (৩৫), ত্রিদিপ চাকমা (৩৮) বিজুবি চাকমা (৩৬) ও সুবিকাশ চাকমা (১৭) আহত হয়েছে বলে দাবী ভুমি রক্ষা কমিটির।
তকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, পদযাত্রায় অংশ গ্রহনকারীরা আইনশৃংখলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তাদের নিক্ষেপ করা ইটপাটকেলের আঘাতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মিজানুর রহমানসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর ৫ সদস্য আহত হয়েছে। এসময় হামলাকারীদের নিভৃত করতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুড়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কমিটির সদস্য ও কবাখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্ব কল্যাণ চাকমা জানান, বাবুছড়ায় ২১ টি পাহাড়ী পরিবারকে উচ্ছেদ করে বিজিবি সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। তাই বিজিবি সদর দপ্তর প্রত্যাহারের মাধ্যমে উচ্ছেদকৃতদের পৈতৃক বসতভিটা ফিরিয়ে দেয়ার দাবীতে শান্তিপূর্ণভাবে এ পদযাত্রা কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়েছিল। শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বাধা দিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনী পাহাড়ীদের গনতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এবিষয়ে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) উপজেলা সংগঠক কিশোর চাকমা জানান, শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশে আইনশৃংখলা বাহিনীর বাধা, হামলা ও গুলি বর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। তিনি অবিলম্বে বাবুছড়া থেকে বিজিবি সদর দপ্তর প্রত্যাহার করে পাহাড়ীদের বসতভিটা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান।
এদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর বাধার মুখে বিজিবি সদর দপ্তর অভিমুখে পদযাত্রা করতে না পারায় উপজেলার মাইনী রির্সোট ও উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৃথক দু’টি সমাবেশ করে ভূমিরক্ষা কমিটি। সমাবেশে ইউপিডিএফ ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদসংহতি প্রকাশ করে। মাইনী রির্সোটের সমাবেশে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যন নবকমল চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান সুসময় চাকমা, ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরা, কবাখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্ব কল্যাণ চাকমা ও ভূমিরক্ষা কমিটির সদস্য সুজয় চাকমা বক্তব্য রাখেন।
অপরদিকে উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ভূমিরক্ষা কমিটির সদস্য শাক্যমুনি চাকমা, জেলা পিসিপি সদস্য রুপেশ চাকমা, জেলা যুব ফোরাম সদস্য লালন চাকমা ও উপজেলা পিসিপি সভাপতি জহেল চাকমা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে ঘটনার প্রতিবাদে (আজ সোমবার) দীঘিনালায় সকাল সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ এবং নির্মানাধীন বাবুছড়া বিজিবি সদর দপ্তরের নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন প্রতিহত করার কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল জাহিদ পাভেল আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে বলে দাবী করেছেন। দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ সাহাদাত হোসেন টিটো জানান, বিজিবি সদর দপ্তরে হামলা করতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্যের কারনেই ভূমিরক্ষা কমিটি পদযাত্রায় বাধা দেয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি সাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.