শনিবার থেকে দুদিন ব্যাপী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা শাখার ৫ম সম্মেলন শুরু হয়েছে।
‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন জোরদার করার লক্ষে জুম্ম জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করুন’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা সম্মেলনের উদ্বোধক ও উদ্বোধনী সভার প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক সত্যবীর দেওয়ান এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন জনসংহতি সমিতির বিদায়ী রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ও উদ্বোধনী সভার সভাপতি গুণেন্দু বিকাশ চাকমা।
সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবী লতা চাকমা, এম এন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক বিজয় কেতন চাকমা, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির বিদায়ী রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোর কুমার চাকমা। এসময় সন্তু লারমাসহ জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দুদিনব্যাপী জেলা সম্মেলনে প্রায় আড়াই শতাধিক প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক যোগদান করেন।
সন্মেলনে বক্তারা সরকার পার্বত্য চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়ন না করে একের পর এক চুক্তির ধারা লংঘন করছে অভিযোগ করে বলেন, জনসংহতি সমিতির মতামতকে উপেক্ষা করে সরকার ফ্যাক্স যোগে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহের চেয়ারম্যানসহ ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তী পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন এবং রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য বার বার দাবি ও স্মারকলিপি দেয়ার সত্বেও সরকার মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বক্তারা অবিলম্বে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিতের দাবী জানান।
প্রধান অতিথি সত্যবীর দেওয়ান তাঁর বক্তব্যে গত ২৫ মার্চ ২০১৫ খ্রি: জনসংহতি সমিতির মতামতকে উপেক্ষা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক ফ্যাক্সযোগে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহে চেয়ারম্যানসহ ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তী পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সুস্পষ্ট লংঘন বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, সরকার যতই আদিবাসী জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করুক না কেন, জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে জুম্ম জনগণ তা লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিহত করবে।
সত্যবীর দেওয়ান সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক ও শুভাকাঙ্খীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, পৃথিবীতে যদি আমরা বেঁচে থাকতে চাই তাহলে আমাদের বীরত্বের সাথে লড়াই করতে হবে। ১৭ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে জুম্ম জনগণকে আরও তীব্রভাবে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, আগামী দিনের কঠিন সংগ্রামে আরও আত্মত্যাগী চেতনায় এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথি মাধবী লতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা বিবেচনা করেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু সরকার গণমুখী নয়, তাই ১৭ বছরেও এই চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না। এটা শেখ হাসিনা সরকারের বেইমানি। তিনি আরও বলেন, জুম্ম জাতি বীরত্বের সাথে লড়াই করেছে। এই লড়াইয়ে অনেক রক্ত ঝরেছে, অনেক মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠিত হয়েছে। আমাদের এই সংগ্রাম অন্যায় শাসন-শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং আমাদের ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
বিজয় কেতন চাকমা কিছু কিছু গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত। আমাদেরকে সত্যকে সত্য, অন্যায়কে অন্যায় বলে তুলে ধরতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সত্যিকারভাবে যা ঘটছে তা গণমাধ্যমে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। সেখানে অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যার বেসাতি করা হয়।
রাঙামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত লংঘন করে চলেছে।
সভাপতির বক্তব্যে গুণেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী জুম্ম জনগণ তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে টিকে থাকবে কি থাকবে না, নাকি ইসলামী সম্প্রসারণবাদ প্রতিষ্ঠিত হবেÑএটাই হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান মূল প্রশ্ন। তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকতে চাই, তাহলে আমাদের সর্বস্তরের জনগণকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.