• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
প্রশাসন ও বিচার বিভাগের পক্ষপাতমূলক আচরণে পার্বত্য মানবাধিকার পরিস্থিতিকে সংকটাপন্ন করবে                    রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত                    সাজেকে ট্রাক উল্টে খাদে নিহত ৯, আহত ৬                    বৃহস্পতিবারের ডাকা অর্ধ দিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধ রাঙামাটি শহর আওতামুক্ত                    দ্রুত কমছে কাপ্তাই হ্রদের পানি,স্বাভাবিকের চেয়ে আট ফুট পানি কম                    বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে অর্ধ দিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধ ডেকেছে ইউপিডিএফ                    কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার ২৮ বছর পর খারিজ                    পার্বত্যাঞ্চল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ১২জন ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা                    ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বিজু,সাংগ্রাই, বৈসুক উৎসব শুরু                    বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু উপলক্ষে রাঙামাটিতে বর্নাঢ্য র‌্যালী                    বান্দরবানে ধরপাকড়,হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ ও আটকদের মুক্তির দাবি তিন সংগঠনের                    বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর আর্থিক সহায়তা                    রাঙামাটিতে জুম উৎসবের আয়োজন                    বন বিভাগের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে সংবাদ সন্মেলন                    বিলাইছড়িতে আগুনে ৬টি বসতঘর পুড়েছে, আহত ১                    পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস কর্মসূচি পালন                    রাবিপ্রবি’তে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত                    বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধীতে বিজিবির মহাপরিচালকের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন                    রাঙামাটিতে নতুন সিভিল সার্জন ডাঃ নূয়েন খীসা                    রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের দরপত্র প্রকাশ নিয়ে গোপণীয়তার অভিযোগ                    কাপ্তাইয়ে গাছ কাটার অনুমতি না থাকায় ব্রীজ নির্মাণে অশ্চিয়তা                    
 
ads

সংঘরাজ ভদন্ত তিলোকানন্দ ভান্তেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রগতি খীসা/ : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 10 Nov 2023   Friday

শলক এলাকার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণধর সুসন্তান লক্ষী মোহন চাকমা। বরগাঙ বিধোত শলক পাড়ে কৈশোর পেরিয়ে মাত্র ১৯ বছরের টইটম্বুর যুবক লক্ষী মোহন চাকমা আগারিক জীবনকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে ১৯৫৬ সালে কেশা, লোমা,নখা, দন্তা,থাসো উচ্চারণ করে পড়লেন তথাগত বুদ্ধের সাসন সদ্ধম্মকে জয়ের আনন্দের তিলক। সেদিন হতে তিনি দেহত্যাগ অবধি সুদীর্ঘ ৬৭ বছর বুদ্ধের সাসনে তিলোকানন্দ নামে নাম রূপ ধারণ করে মহামঙ্গল সাধনার কল্যাণের সংশ্রবে সেবা দান করে গেলেন দেশের মানুষকে।
 
আগারিক জীবন পরিচিতিতে বা চাকমা গোঝাগুত্থি ভেদে তিনি ছিলেন লারমা গোঝাভূক্ত বরচাজ্জে গুত্থির গর্বিত সদস্য। চাকমা গোঝাগুত্থির বরচাজ্জে গুত্থি এবং এ গুত্থি সম্পর্কে আমার একটা নিজস্ব পর্যবেক্ষণ রয়েছে। আমার পর্যবেক্ষণে যে তথ্য আমি পেয়েছি তা আমাকে রীতিমত যতদূর না ভাবিয়ে তোলে তার চেয়ে বিস্মিত করে আরো অনেক বেশি।
 
আমার পর্যবেক্ষণে জেনেছি লারমা গোঝাতে ১. বরচাজ্জে ২. মাজ্জেং চাজ্জে ও ৩. চিগোন চাজ্জে নামে তিনটি গুত্থি / ডেইল- ডেলা রয়েছে। অপরপক্ষে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার ৫৯ নং বন্দুকভাঙ্গা মৌজায় যারা আজ দঝা দাগি বরবুয়া গোঝা হিসেবে পরিচয় দিতে আত্মতৃপ্তি বোধ করেন এই দঝা দাগি নাম ধারীগণ হলেন বরচাজ্জে গুত্থি। বন্দুকভাঙ্গার দঝাগুত্থি মানুষদের জিজ্ঞাসা করলে বলেন আমরা বরচাজ্জে ডেইল`র। আমার বড্ডমূল ধারণা চাকমা সমাজে বরবুয়া গোঝাটি যেহেতু বহু গোঝা/বহুগুত্থি মানুষের সমন্বয়ে উদ্ভব হয়েছে সেহেতু বরবুয়া গোঝা পরিচয়ধারীরা বরচাজ্জে গুত্থির লোকেরা নিশ্চয়ই লারমা গোঝা হতে বন্দুকভাঙ্গা মৌজায় বসতি স্থাপন করতে এসে কালক্রমে বরবুয়া গোঝা হয়ে গেছেন। যাক সে কথা, না হয় আরেকদিন বলবো। আজ এখানেই থাক এ প্রসঙ্গটি।
 
পার্বত্য চট্টগ্রাম বৌদ্ধ এসোসিয়েশন ২০১৭ সালে উদ্যোগ গ্রহণ করে যে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সকল অনাথালয় রয়েছে সে সব অনাথালয়ে নিবাসী শিশুদের একবেলা Rich Food খাওয়ানো আর শিক্ষা উপকরণসহ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ/দান বা হস্তান্তর করা। এই উদ্যোগের কর্মসূচি হিসেবে আজকের দীঘিনালা কামুক্যাছড়া ধলাইমা বৌদ্ধ বিহার ও উদোলবাগান ধম্মাচারিয়া বৌদ্ধ বিহারের নবরূপকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বৌদ্ধ এসোসিয়েশন সুযোগ্য নেতৃত্ব ভদন্ত করুনা বংশ ভিক্ষু মহোদয় ও শ্রদ্ধেয় আনন্দ মোহন চাকমার নেতৃত্বে ২০১৭ সালে গমণ করি আজকের চিরশায়িত মহামান্য সংঘরাজ ভদন্ত তিলোকানন্দ ভান্তের সাধনপীঠ বাঘাইছড়ি রূপকারী মগবান শাক্যমণি বিহার তথা কাচালং শিশু সদনে। অনাথ শিশুদের Rich Food খাদ্যভোজ্যের ব্যবস্থা গ্রহণের আমার ও কবি বিনয় বিকাশ তালুকদার এর নেতৃত্বে অগ্রগামী দল আগে সংঘরাজের বাসীত বিহারে অভিমূখে। আমাদের অগ্রগামী দল সেদিন দুপুরের খাবার খেলাম বাবু পাড়ার মামু দীপক চাকমার বাসায়। সেখান হতে চলে গেলাম বাঘাইছড়ি বাজারে। বাজারে গিয়ে দলবল নিয়ে মাছ, মাংস, ডিম আর প্রয়োজনীয় সবজি, তৈল, মরিচ, লবণ, পিয়াঁজ -রসুন, আদা, মসল্লা এবং দানসামগ্রী আর শিক্ষা উপকরণ কিনলাম বাঘাইছড়ি বাজার হতে। বলাবাহুল্য যে আমরা পৌঁছার আগে আমার অনুরোধে তৎকালীন রূপকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাঁর ইউপি সচিব গুলমণি দাদার সহযোগিতায় ১০০ কেজি চাউল পৌঁছে দিয়েছিলেন শিশু সদনে।
 
সংঘরাজের বিহারে পৌঁছে পঞ্চশীল গ্রহণ সমাপনান্তে উপাধ্যক্ষ ভদন্ত শান্ত জ্যোতি ভান্তের আন্তরিক সহযোগিতায় সন্ধ্যা হতে রাত অবধি রান্নার প্রস্তুতি গ্রহণ করি পরবর্তী দিনে অনাথ বন্ধুদের খাওয়ানোর জন্য। পরবর্তী দিন সকালে ভাইস- চেয়ারম্যান সুমিতা দিদির নেতৃত্বে শিশু সদনে পৌঁছেন বাঘাইছড়ির একদল নেতৃত্ব স্থানীয় মানুষ। এসকল গুণবান মানুষদের সংস্পর্শ আমাকে আনন্দে বিমোহিত করেছিলো সেদিন।
 
যথারীতি শুরু হয় আলোচনা পর্ব, সংঘরাজ ভান্তের নাতিদীর্ঘ উপদেশমূলক দেশনা। তারপর শিশুদের সাথে একসঙ্গে সকল অতিথিবর্গের খাবার গ্রহণ সত্যিই ছিলো আনন্দদায়ক ও তাৎপর্যময়। আমরা ফেরার সময় সংঘরাজ ভান্তে হেঁটে হেঁটে আমাদেরকে পৌঁছে দেন বারিবিন্দু ঘাট পর্যন্ত। সংঘরাজ ভান্তে ও অনাথ শিশু বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় কালে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি সেদিন। কী ধরণের দায়িত্বশীল ও মমতাবোধের অধিকারী হলে সেই বৃদ্ধ বয়সকে জয় করে আমাদের দলকে হেঁটে এসে বারিবিন্দু ঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারেন তা ভাবতেই আদৌ সেদিনের জন্য ছল ছল করে উঠে দূ`টো চোখ।
 
এরপর ২০১৮ সালে আমাদের সংগঠন অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম বৌদ্ধ এসোসিয়েশন ও মানবিক কল্যাণ সংঘের সহযোগে একই কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করি খাগড়াছড়ি মাইসছড়ি বৌদ্ধ শিশুঘর অনাথ আশ্রমে। পরবর্তী বছরে টার্গেট ছিলো মনোঘরের শিশুদের জন্য। কিন্তু ভাগ্যের কী যে নিষ্ঠুর পরিহাস ২০১৯ সালের শুরুতেই আমার শরীরে দেখা দিলো ক্যান্সার। চলে গেলাম চেন্নাই। ২০১৯-২০২১ সালে অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা হলো গলার ক্যান্সার। এরপর থেরাপি গ্রহণ। শুরু হলো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগাবধি ঔষধ ক্রয় ও সেবন। এভাবে ক্রমেই দূর্বল হয়ে গেলো পার্বত্য চট্টগ্রাম বৌদ্ধ এসোসিয়েশনের কার্যক্রম। পরেরটা এখন কেবলই ইতিহাস।
 
কাচালংয়ের মানুষদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বন্দরে দাঁড়িয়ে রাঙামাটির মৈত্রী বিহার ও চাকমা রাজ বিহারে স্থায়ীভাবে চলে আসার আবেদন-নিবেদন গ্রহণে তিলোকানন্দ ভান্তের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন। 
 
১৯৮৮ সালের শেষের দিকে রাঙামাটি কাঠালতলী মৈত্রী বিহারের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও তৎকালীন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি পরম পূজনীয় বিমল বংশ মহাস্থবির শেষ বয়সে এসে গ্রামীণ আবহে নিরিবিলি করে ধ্যানসাধনার জন্য হঠাৎ করে মৈত্রী বিহার ত্যাগ করে মহালছড়ি মুবাছড়ি গৌতম বিহারে চলে যান। ভান্তে সে বিহারে কিছু মাস থাকার পর একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভান্তে অসুস্থ হয়ে পড়লে ভান্তেকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালে। খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালে নেওয়ার সময় আর্যপ্রিয় স্থবির, সংরক্ষিত শ্রমণ ও আমি গমণ করি ভান্তের সাথে। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর ভান্তের দুরারোগ্য ব্যাধি সুস্থ হবার নয় জ্ঞাত হয়ে ভান্তেকে মৈত্রী বিহারে ফেরৎ আনা হয়। বিমল বংশ ভান্তে অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন রোগভোগে মৈত্রী বিহারে দেহত্যাগ করেন। ভান্তের দেহত্যাগের পর ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী বিহার ও সংঘকে পরিচালনার ক্ষেত্রে শূন্যতা দেখা দেয়। তখনকার সময়ের বিহার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিলোকানন্দ ভান্তেকে যথাযোগ্য মর্যাদা ও গৌরবের সহিত নিয়ে আসবেন মৈত্রী বিহারে। একপর্যায়ে তিলোকানন্দ ভান্তে আনন্দ বিহারে এলে ভান্তের সাথে সাক্ষাৎ করেন মৈত্রী বিহার নেতৃবৃন্দ ও ভিক্ষুসংঘের সদস্যবৃন্দ।
 
সে সময়ের পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সহ-সভাপতি শ্রদ্ধেয় সত্যানন্দ মহাথের ও সাধারণ সম্পাদক ধর্মালঙ্কার ভিক্ষু বিষয়টি উপস্থাপন করেন ভান্তের সকাছে। প্রস্তাব শুনে তিলোকানন্দ ভান্তের করুণার্দ্রচিত্তে অথচ অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলেন আমি আমার কাচালংয়ের বনবাদারের অনাথ-অসহায় শিশুদের ফেলে কোথাও যেতে পারবো না। ভান্তে বলেন অনাথ শিশুদের করুণমূখ দেখে আমি তথাগত বুদ্ধের মৈত্রী ও করুণা শিক্ষা অধ্যয়ন করি। অতএব, তোমাদের প্রস্তাব আমার গ্রহণ করার নয় এই বলে সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন প্রস্তাব।
 
এদিকে রাঙামাটি চাকমা রাজ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ বুদ্ধ রক্ষিত স্থবির মারা গেলে তৎকালীন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সহজ-সরল উ. চাইন্দ্যাচারা মহাথের সাময়িক দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাঙ্গামাটি চাকমা রাজ বিহারের। উ.চাইন্দ্যাচারা মহাথের চাকমা রাজ বিহার হতে চলে গেলে পুনরায় শূন্য হয়ে পড়ে চাকমা রাজ বিহারের অধ্যক্ষের পদটি। এ অবস্থায় মহামান্যবর চাকমা রাজ বাহাদুর চিন্তিত হয়ে পড়েন কাকে বরিত করবেন অধ্যক্ষ পদে। তৎকালীন চাকমা রাজ বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবু ধনঞ্জয় চাকমা মহোদয় মহামান্য রাজা বাহাদুরের পক্ষে আলাপ আলোচনা করতে থাকেন ভিক্ষুসংঘের সাথে।
 
একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয় তিলোকানন্দ ভান্তেকে চাকমা রাজ বিহারের অধ্যক্ষ পদ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হবে। রাজদ্বীপস্থ মদন বাবুকে (সে সময়ের চাকমা রাজ বিহার পরিচালনা কমিটির সদস্য) দায়িত্ব প্রদান করে প্রেরণ করা হয় তিলোকানন্দ ভান্তের কাছে। মদন বাবু বাঘাইছড়ি হতে ফিরলেন ব্যর্থ মনোরথে। ভান্তে এবারও ফিরি দিলেন প্রস্তাব। রাঙামাটির জ্বলমলে বিজলী আলোর ডাক ফিরিয়ে দিয়ে বরাবরই আগলে রাখলেন কেরসিনে জ্বালানো চেরাগের পহরকে। এই হচ্ছে মহাত্যাগী তিলোকানন্দ ভান্তের দৃঢ়তর ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসা অনাথদের, এই ভালোবাসা মানবতার আর এই ভালো্বাসা বুদ্ধের মৈত্রী, মুদিতা ও করুণার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
 
তিলোকানন্দ ভান্তে রাজ বিহারে না আসাতেই রাজ বিহারের দায়িত্ব পড়ে নবীন ভিক্ষু প্রিয়তিষ্য ভিক্ষুর উপর। মৈত্রী বিহারের অন্তেবাসী ভিক্ষু প্রিয়তিষ্যকে রাজ বিহারে নিয়ে যাবার দিন তারিখ ঠিক হলে সংঘনায়ক সুগত ভান্তে, অভয় তিষ্য ভান্তে ও তিলোকানন্দ ভান্তে আসলেন মৈত্রী বিহারে। আনন্দ বিহার, মৈত্রী বিহার পরিচালনা কমিটির নেতৃবর্গসহ রাঙ্গামাটি পৌর এলাকার ভিক্ষু সংঘসহ নিয়ে যাওয়া হলো রাজ বিহারে প্রিয়তিষ্যকে। তিনজন বর্ষীয়ান সংঘনায়কের(পরবর্তীতে তিন জনই সংঘরাজ) উপস্থিতে স্বয়ং মহোপসিকা রাজমাতা আরতি রায় মহোদয় ফুলের প্লেট দিয়ে ফাং করে প্রিয়তিষ্যকে বরণ করেন নেন রাজ বিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৯৩ সালে। সংঘনায়ক সুগত প্রিয় ভান্তে নানা উপদেশ দেন রাজমাতাকে সেদিন। আর সে কারণে প্রিয়তিষ্য ভিক্ষু যতোদিন রাজ বিহারে অবস্থান করেছিলো ততদিন পূত্রস্নেহ পেয়েছে রাজমাতা ও রাজ পরিবারের প্রতিটি সদস্য হতে। রাজ পরিবারের এ ভালোবাসা কোন দিনই ভূলতে পারবেনা প্রিয়তিষ্য। সেই মহামান্য রাজার কাছে চির ঋণী।
 
তিলোকানন্দ ভান্তের এ সমস্ত কথা অনেকেই জানেন না। তাঁর ত্যাগ পরীক্ষিত। তিলোকানন্দ ভান্তেকে দেখা ও জানার সৌভাগ্য হয়েছে আমার অত্যন্ত কাছে থেকে। ভান্তে আমাকে স্নেহ করতেন প্রাণ উজাড় করে। বলে রাখা ভালো যে চাকমা গোঝাগুত্থি মতে তিলোকানন্দ ভান্তে আর আমি বরচাজ্জে গুত্থির সদস্য না জানি সে কারণেই ভান্তে আমাকে বেশি স্নেহ করতেন কিনা?
 
আহা! জীবন। কিছুই করতে পারলাম না ভান্তের জন্য। তিলোকানন্দ ভান্তে ছিলেন দয়ার মহাসাগর, ত্যাগে হিমালয়ের মতো উচুঁ। প্রজ্ঞায় ছিলেন অকল্পনীয়। তিনি চিরতরে জীবন ও জগত হতে হারিয়ে গেলেন ২ নভেম্বর দিবাগত রাতে একেবারেই চুপিচুপি করে। কাকে যে এ জাতি, এ সমাজ হারালো সে খবরা খবরের সম্বিত এখনো ফিরেনি অনেকের। কিন্তু আমরা হারিয়েছি সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ একজন ধর্মপিতাকে যাকে আর ফিরে পাবো না কোন দিন। বিশ্বজয়ী তিনি। মিয়ানমার সরকার হতে প্রাপ্ত অভিধার গৌরব মুকুট-ই-তার বিশ্বজয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিশ্ব চাকমা ভিক্ষুদের মধ্যে তিনিই প্রথম যিনি অগগ্ মহাপন্ডিতা অভিধায় ভূষিত হয়েছেন। জানি না আর কতো শতাব্দীর পর এ ধরণের দূর্লভ সম্মান জুটবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজের তা এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
**শ্রদ্ধাঞ্জলির প্রবন্ধটি লেখক কবি প্রগতি খীসা**
 

 

সংশ্লিষ্ট খবর:
ads
ads
এই বিভাগের সর্বশেষ
আর্কাইভ