রাঙামাটির সংসদীয় আসনের নির্বাচিত সাংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার অব্যাহতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে স্বীকৃত শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা এখনো আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়নি। ১৩-দফা সংশোধনী প্রস্তাব সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলেও এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করা হয়নি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি লক্ষে উক্ত ১৩-দফার ভিত্তিতে অচিরেই উক্ত আইন সংশোধনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
শুক্রবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির চতুর্থ জেলা শাখা ও তৃতীয় সদর থানা শাখা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাঙামাটির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সন্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির নেত্রী সুমিত্রা চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জড়িতা চাকমা। জোনাকি চাকমার সঞ্চালনায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি বাচ্চু চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি টোয়েন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিমিতা চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠান । এর আগে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও দলীয় সংগীতের মাধ্যমে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সন্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি।
সন্মেলন শেষে সম্মেলনে সুমিত্রা চাকমাকে সভাপতি, জোনাকি চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও ঝর্ণা চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করে ২১-সদস্য বিশিষ্ট মহিলা সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটি এবং মিনা চাকমাকে সভাপতি, সুবিনা চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও শীলা দেওয়ানকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭-সদস্য বিশিষ্ট রাঙামাটি সদর থানা কমিটি গঠন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার এমপির আরও বলেন, গতানুগতিক রাজনীতি নয় আমাদেরকে সত্যিকার ও ত্যাগের রাজনীতি করতে হবে। আমরা যে রাজনীতি করছি সেটা ত্যাগের রাজনীতি। তাই রাজনীতিটা গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। নারীদেরও সমানতালে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে জনগনই আমাদের সর্বস্ব। জনগনকে আমাদের অবশ্যই সেবা করতে হবে। তাদের মাঝে আমাদেরকে খুঁজে পেতে হবে। অধিকতর সংযমি ও দায়িত্ববান হয়ে আমাদের সেই দায়িত্ব প্রতিপালন করতে হবে।
বিশেষ অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জড়িতা চাকমা বলেন, জুম্ম জাতীয় জীবনে এ সম্মেলন এক গুরুত্বপূর্ণ দিন কারণ জুম্ম জনগনের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এখনো চলমান রয়েছে। জুম্ম নারীদের এ সম্মেলন আমাদেরকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হবে আমাদের মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমাকে। তিনিই প্রথম জুম্ম নারীদের অধিকারের প্রশ্নে আলোর পথ দেখিয়েছেন। পশ্চাদপদ জুম্ম নারী সমাজকে আন্দোলনে সামিল হতে তিনি উৎসাহ যুগিয়েছেন। হাটিহাটি পা পা করে আজ নারীরা এগিয়ে চলেছে। আমরা আশাবাদী, সামনের দিনগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও আমাদের জাতির মুক্তির জন্য যথেষ্ট অবদান রাখবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বাচ্চু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি নাজুক ও উদ্বেগজনক। সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করার কারণে জনসংহতি সমিতি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ২৯ জুলাই রাঙামাটি জেলায় হাট-বাজার বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সেই হাট-বাজার বর্জনের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে অসহযোগ আন্দোলনকে বেগবান করতে নারী সমাজকে আহ্বান জানান।
উক্ত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগ্রামের ইতিহাসে নারীদের অগ্রগন্য অবদানের কথা তুলে ধরেন। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের গড়িমসি নিয়ে উদ্বেগ ও হতাশা ব্যক্ত করেন। অবিলম্বে এ চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে কঠিন সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন। এ লক্ষ্যে চলমান অসহযোগ আন্দোলনে সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.