১৯০০সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির সংশোধনীর দাবী জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ধারার সাথে ১৯০০ সালের পার্বত্য শাসন বিধি সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাই পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনকে কার্যকর করতে হলে ১৯০০ সালের পার্বত্য শাসন বিধি সংশোধনী অবশ্যই আনতে হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে কর্মরত জেলা প্রশাসকরা যে কাজগুলো করে থাকেন তারা প্রত্যেক দিন পার্বত্য চুক্তি লংঘন করছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের আইনের বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন পার্বত্য সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তির স্বাক্ষরের ১৭ বছর অতিবাহিত হলেও পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত হয়নি। সরকার পার্বত্য চুক্তির প্রতিটি পদে পদে চুক্তি লংঘন করে চলেছে। সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে মোটেই অগ্রহী নয়।
রোববার রাঙামাটিতে স্থায়িত্বশীল সুশাসন কৌশল হিসেবে জনসচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিক আইনসমুহের গতিশীলকরন প্রকল্প আয়োজিত পরামর্শক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ও নওজোয়ানের উদ্যোগে আশিকা সন্মেলন কক্ষে পরামর্শক সভায় আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে দেন সিএইটি হেডম্যান এসোসিয়েসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট শক্তিপদ ত্রিপুরা, নারী নেত্রী টুকু তালুকদার, রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা, রাজস্থলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উসিন সিন মারমা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন আশিকার কর্মকর্তা রিপন চাকমা। সভায় প্রকল্পের মূল বিষয়বস্তুু উপস্থাপন করেন আশিকার প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এ্যাড কক্্রী তালুকদার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আশিকার কর্মকর্তা বিশাখা তংচঙ্গ্যা। পরিচালনায় দিন ব্যাপী পরামর্শক সভায় প্রথাগত ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, উন্নয়নকর্মী ও সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন।
সভায় সন্তু লারমা তার বক্তব্যে আরও বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌর সভা ও প্রথাগত নেতৃত্ব হেডম্যান-কার্বারীদের প্রশাসনিক কার্যক্রম এখনো অনেক দুর্বল পর্যায়ে রয়ে গেছে। এটির একটি কারণ রাজনৈতিক দিকও হতে পারে। কারণ উপজেলা ইউপি হেডম্যান কার্বারীদের মধ্যেও নানা দলের প্রতিনিধি রয়েছেন। পার্বত্য চুক্তি পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবী না জানিয়ে তারা বিভিন্ন সময় নিজ নিজ দলের হয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক দায়িত্ব কার হাতে রয়েছে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে পড়তে হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে তিন ধরনের শাসন ব্যবস্থা রয়েছে। পার্বত্য চুক্তির আলোকে এখানে আঞ্চলিক পরিষদ,জেলা পরিষদের শাসন ব্যবস্থা ছাড়াও অপরাশেন উত্তোরণ নামে সেনা শাসনের কর্তৃত্ব ও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি অনুযায়ী প্রশাসকরা আরেক ধরনের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকেন। আইনে কোথাও উল্লেখ নেই যে জেলা প্রশাসকরা প্রথাগত হেডম্যান ও কারবারী নিয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক কারবারী নিয়োগ দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সার্কেল চীফরা এগিয়ে আসছেন না। সার্কেল চীফদের মধ্যে একমাত্র চাকমা সার্কেল চীফ চুক্তি বাস্তবায়নে সচেতন ও এগিয়ে আসলেও বাকী সার্কেল চীফরা এগিয়ে আসছেন না। তাদের উদ্যোগ ও সাহস নেই।
তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রথাগত হেডম্যন-কারবারীদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু তাদের ভূমিকা দুর্বল ও হেডম্যানদের ভূমিকা জটিল। হেডম্যানরা সরকারের সাথে অপোস করে তারা সহবস্থান করছেন। হেডম্যানরা যদি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের সচেতন হলে মৌজাবাসীরাও সচেতন হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ শাসন ব্যবস্থা বা জনগণের অধিকার পেতে চায় এবং গণমূখী শাসন ব্যবস্থা ফিলে চায় তাহলে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তিনি হেডম্যান-কারবারীদের চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা চাকুরী বানিজ্য, উন্নয়নের বরাদ্দ ভাগাভাগি ও দলের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন উল্লেখ করে সন্তু লারমা আরও বলেন, তিন পার্বত্য পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জনগাণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সচেতন নন তারা শুধু ভাগাভোটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। তারা জনগনের অধিকার নিয়ে এগিয়ে আসতে চান না। কারণ এখানে শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে যেমনি দ্বিধাগ্রস্থ তেমনি পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও দ্বিধাগ্রস্থ।
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের ৫ সদস্যর সংখ্যা বাড়িয়ে বর্তমানে ১৫ সদস্য উন্নীত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের শক্তি বৃদ্ধি করা এবং চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যাতে এগুতে না পারে এবং বাধাগ্রস্থ করতে সরকার এই ক্ষেত্র তৈরী করেছে। সম্প্রতি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ৩২৫টি এবং এর আগে ৯০টি সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু সরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.