• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
রাবিপ্রবি’তে জুলাই বিপ্লবের স্মরণে র‌্যালি ও দোয়া অনুষ্ঠিত                    পার্বত্য চট্টগ্রামে ছয় মাসে ১০৩টি মানবধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে                    কাপ্তাইয়ে সাতটি দোকান পুড়ে ছাই                    জুরাছড়িতে এসডিজির স্থানীয়করণ এবং ত্বরানিত লক্ষে কর্মশালা                    আহত অবস্থায় উদ্ধার করা সাম্বার হরিণটিকে বাঁচানো গেল না                    রাঙামাটিতে সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যুব প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি’র রিজেন্ট বোর্ডের ৭ম সভা অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি`র নির্মানাধীন দুটি ভবন থেকে চাঁদার দাবিতে দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র মহড়া                    রাঙামাটি জেলা পরিষদে নিয়োগ ও শিক্ষা বৃত্তিতে বৈষম্য বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলন                    রাঙামাটিতে এইচএসসির পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক                    বিলাইছড়িতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন                    রাবিপ্রবি’তে একাডেমিক কাউন্সিলের ১২তম সভা অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি’তে পরিকল্পিত বনায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন                    রাঙামাটিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে সনাক-টিআইবি’র অ্যাডভোকেসি সভা                    খাগড়াছড়িতে বীর শহীদদের প্রতি আরাফাত রহমান কোকোর ক্রীড়া পরিষদের শ্রদ্ধাঞ্জলী                    সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের গ্রেড উন্নীতকরণের দাবীতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি                    পাহাড়ে খড়ের পরিবর্তে শুকনা কলা পাতায় মাশরুম চাষে সাফল্য                    লংগদুতে গৃহবধূকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগে এক যুবক আটক                    পাহাড়ে হাতি ও মানুষরে দ্বন্দ্ব কমছে                    রাঙামাটিতে ৮৫ হাজার ৮৬০ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস খাওয়ানো হবে                    শিশুর যৌন নির্যাতনকারী দাদুকে আটক করেছে পুলিশ                    
 
ads

রাঙামাটিতে পার্বত্য চুক্তির ১৮তম বর্ষ পূর্তি পালিত
পার্বত্য চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবীতে আন্দোলনের নতুন দশ দফা কর্মসূচি ঘোষনা সন্তু লারমার

স্টাফ রিপোর্টার : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 02 Dec 2015   Wednesday

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)  পার্বত্য চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবীতে আন্দোলনের দশ দফা কর্মসূচি  ঘোষনা করেছেন। 

 

কর্মসূচির মধ্যে  রয়েছে হরতাল, অবরোধ, আফিস ও আদালত বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট, অর্থনৈতিক অবরোধসহ ইত্যাদি। আগামী ১ জানুয়ারী থেকে পর্যায়ক্রমে এ কর্মসূচি শুরু হবে।

 

বুধবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চুক্তির ১৮তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু  লারমা এসব কর্মসূচি ঘোষনা দেন।

 

রাঙামাটি জিমনেসিয়াম চত্বরে অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সমাবেশে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ওয়ার্কাস পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন।

 

বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রভা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা উদয়ন ত্রিপুরা।

 

সমাবেশে তিন পার্বত্য জেলা থেকে লক্ষাধিক পাহাড়ী নারী-পুরুষ অংশ নেন।  সমাবেশ স্থলে লোকজনের  বসার স্থান সংকুলান না হওয়ায়  রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের উপর অবস্থান নেন। এতে সড়কের রাঙামাটি পার্বত্য কার্যালয়  সম্মুখ থেকে কল্যাণপুর এলাকা পর্যন্ত লোকারণ্যে পূর্ন হয়ে যায়। এসময় উভয় দিকের  সাড়ে চার ঘন্টা  পর্যন্ত যানবাহান চলাচল বন্ধ থাকে। অনুষ্ঠান শুরুতে ঐতিহ্যবাহী গিরিসুর শিল্প গোষ্ঠী শিল্পীরা গণজাগরণ সংগীত পরিবেশন করেন।

 

দশ দফা কর্মসূচীতে যা রয়েছে: চুক্তি বিরোধী ও সরকারের দালালদের সামাজিকভাবে বয়কট, হরতাল অবরোধ পালন, অর্থনৈতিক অবরোধ পালন, পর্যটন কেন্দ্রের বিরোধিতা করা, অবৈধ পর্যটন প্রতিস্থাপনের প্রতিরোধ করা, সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত অফিস বর্জনত, জুম্ম জনগণ কর্তৃক আদালত বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট, চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থীদের প্রতিরোধ করা ও ভূমি অধিগ্রহন ও বেদখল প্রতিরোধ করা।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে আরো বলেন, পার্বত্য সমস্যা সমাধানের জন্য পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে  সরকার জুম্ম জনগণের সাথে প্রতারণা এবং নানান ষড়যন্ত্র ও চুক্তি পরিপন্থী কাজ করে চলেছে। বর্তমানে সরকার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে সম্পুর্ন অচল করে রেখেছে।

 

তিনি বলেন, চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এ অঞ্চলের বসবাসরত ১৪টি ভাষাভাষী জুম্ম জনগণ আজ অস্তিত্বের সংকটের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত করছে। পার্বত্যাঞ্চলে অমানবিকভাবে শোষন-নিপীড়ন নির্যাতন অব্যাহতভাবে চলছে। প্রতিদিনই জুম্ম জনগন তাদের ভূমির অধিকার হারাচ্ছে। নাগরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার পালনে সমস্যা দিনদিন প্রকট হচ্ছে। মানুষের মর্যাদা নিয়ে মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় জুম্ম জনগণ। তাই এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না।

 

সন্তু লারম অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামীকরণ ও সামরিকীকরণ এই দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার নতুন করে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।  এই দুই কারণেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে ‘ধীরে চলো’ নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। সরকারই এ সমস্যার জন্ম দিয়েছে। অতএব তার সমাধানও তাকে করতে হবে।

 

১৯০০ সালের শাসনবিধি সংশোধন না করে অপারেশন উত্তরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে সেনা বাহিনীর অধীনে রেখে সরকার নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদেরও পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসের প্রচ্ছন্ন মদদ দিচ্ছে সরকার। বহিরাগতদের মাধ্যমে ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। সরকারী স্থাপনা নামেও  ভূমি অধিগ্রহণের করে ভূমি বেদখল করা হচ্ছে।

 

সন্তু লারমা আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সরকার স্বীকার করছে নিয়েছে যে বাঙালী নয় এমন স্বতন্ত্র জাতিস্বত্ত্বা রয়েছে। জুম্ম জনগণ উগ্রজাতিয়তাবাদ ও মৌলবাদ থেকে মুক্তি চাই। জীবিত অবস্থায় মৃত থাকতে  চায় না। তবে সরকার যদি জুম্ম জনগণের আশা-আকাংখা বুঝতে না পারে তাহলে পার্বত্যাঞ্চলের বুকে আগুন জ্বলবে বলে তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। 

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম জনগণের আদি আবাসভূমি। এখানে অন্য কারোর অধিকার সর্বাগ্রে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না  উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার যদি এভাবে চলতে থাকে তবে আমাদের মুসলিম হয়ে যেতে হবে। না হলে দেশান্তরিত হতে হবে। যারা এটি মানতে  চান না তাদেরকে  চুক্তি পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নে অবশ্যই আন্দোলেন-সংগ্রামের জন্য রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বর্ষ পূর্তির জন্য পার্বত্য শান্তি চুক্তি করা হয়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবায়ন না হয়েও এখন বর্ষপূর্তি পালিত হয়! 

 

তিনি সুর্নিদিষ্ট টাইম  ফ্রেম-এর মধ্যে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী  জানিয়ে বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ধীরগতির কারণে পাহাড়ী-বাঙালী সাম্প্রদায়িক শান্তি নষ্ট হচ্ছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকার ভুল করেছে।

 

যারা চুক্তির বিরোধিতা করছে তারা  রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই বিরোধীতা করছে।  যারা চুক্তি বিরোধীতা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে রাষ্ট্রকে। তিনি বলেন, চুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে সরকার বললেও মন্ত্রীরা কেউ কেউ বলছেন শতকরা ৯৫ ভাগ হয়েছে। মন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এগুলো তারা বলছেন। তেল মারার একটা পর্যায় থাকা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

গৌতম দেওয়ান বলেন, ভূমি বিষয়ক জটিলতার দোহাই দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে আসছে না। পাহাড়ে সরকার দলের জনপ্রতিনিধিরাই সরকার ও জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এরাই ইতিহাসের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে জুম্ম জনগণের কাছে। এখন থেকে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।

 

তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া পাশাপাশি প্রতিটি ঘরে ঘরে এ আন্দোলন পৌছে দেয়ার আহ্বান জানান।

 

রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, সরকার চুক্তি বাস্তবানে নানা দুরভিসন্ধি করছে। পাহাড়ের রক্ত দিয়ে এ চুক্তি লেখা হয়েছে। এ রক্ত বৃথা যেতে পারে না। জুম্ম জনগনের অধিকার বাস্তবায়িত হলে সারা দেশের আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে বাধা থাকবে না। সরকার আদিবাসীদের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী স্বীকৃতি দিয়ে অপমাণিত করছে।

 

ড. রাহমান নাসির উদ্দিন বলেন, বর্ষপূর্তিতে আনন্দোৎসব করার কথা, কিন্তু আজ বিক্ষোভ হচ্ছে। এর জবাব রাষ্ট্রকেই দিতে হবে। পার্বত্য চুক্তি কোন ব্যক্তির সাথে হয়নি, হয়েছে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে। দীর্ঘ ১৮ বছর অপেক্ষার পর বিক্ষোভ করে বাস্তবায়নের দাবী জানাতে হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রাষ্ট্র মিথ্যাচার করছে।

 

তিনি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকেই বাঙালী ছাড়া এ দেশে বসবাসকারী অবাঙালীরা এদেশের নাগরিক নয় বলে ঘোষনার মধ্য দিয়ে বাঙালীকরণ শুরু হয়েছে। শতকরা হিসাবই রাষ্ট্রে জোচ্চুরি। আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে পঞ্চম সংবিধানের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র জাতিস¦ত্তার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র জাতিসত্বা বলে পৃথিবীতে কোথাও কিছু নেই।

 

কেএসমং মারমা বলেন, পর্যটনসহ বিভিন্ন স্থাপনার নামে জমি বেদখল করা হয়েছে। শক্তিপদ ত্রিপুরা বলেন, যে জাতি মরতে জানে সে জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারে না।

 

উদয়ন ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, উন্নয়নের  নামে রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ  এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনা পাহাড়ে পরিবেশ অশান্ত করার পায়তারা করছে সরকার। তিনি বহিরাগত সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি জানান। 

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

ads
ads
এই বিভাগের সর্বশেষ
আর্কাইভ