বুধবার রাঙামাটিতে আদিবাসীদের ভুমি অধিকার ও সংস্কৃতি সুরক্ষা হেডম্যান কার্বারী ও সুশীল সমাজের করণীয় শীর্ষক দিনব্যাপী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা অভিযোগ করে বলেছেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখল এবং সংস্কৃতি বিকৃতি করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ, সাকের্ল চীফ, হেডম্যান, কার্বারীদের মতামত সম্মতি উপেক্ষা করে জোর করে ভুমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে পর্যটন করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস বিকৃতিসহ এলাকার নাম পরিবর্তন করে ইচ্ছামত নাম দেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা টংগ্যার সন্মেলন কক্ষে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক ও কাপেং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়াক-এর সহ-সভাপতি প্রেমলাল চাকমার সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান, শিক্ষাবিদ প্রফেসর মংসানু চৌধুরী, জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা, আদিবাসী নেতা বিজয় কেতন চাকমা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাকমা রাজা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য পার্বত্য চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আদিবাসী অধুষিত অঞ্চলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারসহ অন্যান্য প্রশাসনযন্ত্র এটি মানছে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ও পার্বত্য জেলা পরিষদ, সার্কেল চীফ, হেডম্যান ও কার্বারীদের সম্মতি ও মতামত উপক্ষে করে পর্যটন করা হচ্ছে। পর্যটনের কারণে আদিবাসীদের সংস্কৃতি হুমকিতে পড়েছে। পর্যটনের নামে ভুমি অধিগ্রহণ করায় আদিবাসীরা ভুমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে। নারীরা যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আইন করতে হলে আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের মতামত নেওয়ার কথা। কিন্তু নেওয়া হয় না। ঢাকায় বসে ইচ্ছেমত আইন বানানো হয়। যা পাহাড়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিকভাবে সাংঘর্ষিক। বাস্তবতার সাথে এ আইনগুলোর মিল নেই। উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের বনভুমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ সম্মত না হওয়ায় যেদিকে উন্নয়ন করা হচ্ছে সেদিকে বন উজাড় করা হচ্ছে। পানির উৎস নষ্ট করা হচ্ছে। ছড়া ও ঝিড়ি হতে পাথর উত্তোলন করার কারণে ছড়া ও ঝর্ণা মরে যাচ্ছে। রাঙামাটি জেলা পরিষদকে পর্যটন বিভাগটি অ-সম্পূর্ণ অবস্থায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নামগুলো বিকৃতি করা হচ্ছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্রবিন্দু জেলা পরিষদকে দুর্নীতি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এখানে কোন গণতন্ত্র চর্চা নেই। এই প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতির জন্য সাধারণ মানুষকে আরও সোচ্চার হওয়ার দরকার।
রাঙামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা বলেন, আমরা জেলা পরিষদকে মানি কিন্তু পরিষদে যাদের বসানো হয়েছে তাদের মানি না। তারা অনির্বাচিত। তাদের দ্বারা পরিষদ থেকে সাধারণ মানুষে অধিকার আশা করা যায় না। পরিষদের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের প্রতিষ্ঠান জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.