অপহৃত স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা মুক্তির দাবীতে বান্দরবানে ডাকা লাগাতার সড়ক ও নৌপথ অবরোধের প্রথম দিন বুধবার শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।
এদিকে অপহৃত আওয়ামীলীগ নেতাকে উদ্ধারে পুলিশ ও সেনাবাহিনী অভিযানে নেমেছে। তবে তাকে এখনো উদ্ধার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। অপহরণের ঘটনায় মামলা দায়ের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) জেলা শাখার এক নেতাকে আটক করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামীলীগের লাগাতার সড়ক ও নৌপথ অবরোধের অংশ হিসেবে প্রথম দিন বুধবার সকাল থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে জেলা আ’লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাস্তায়-রাস্তায় অবস্থান করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের অভ্যন্তরীণ ও আন্ত: উপজেলা সড়কগুলোতে কোনো যান চলাচল করেনি। শহরে রিক্সা পর্যন্ত চলাচল করতে দেয়নি পিকেটাররা। ফলে দুই-তিন কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে অনেককে অফিস করতে হয়েছে। এতে করে দূর থেকে আসা পর্যটকদের ও উপজেলা স্থানীয়দের ভোগান্তি পোহাতে হয়। শহরের মোড়ে মোড়ে পিকেটাররা অবস্থান নিলেও কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যান চলাচল বন্ধ ছাড়া অফিস-আদালত, দোকানপাত সব কিছু স্বাভাবিক নিয়মে খোলা ছিল। সাঙ্গু নদীতেও যাত্রীবাহী কোনো ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল করেনি বলে জানা গেছে।
এদিকে, এ ঘটনায় হ্লামংচিং মার্মা বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা করেন। এজাহারভুক্ত নামের তালিকার মধ্যে রয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও পিসিজেএসএস নেতা কে এস মং, সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন, রোয়াংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যবামং মার্মা, জেলা পিসিজেএসএস সভাপতি উছোমং মার্মা, মংপু হেডম্যান (মৌজা প্রধান), পিসিজেএসএসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক জলিমং মার্মা, নোয়াপতং ইউপি চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মার্মা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শম্ভু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিজেএসএস নেতা, এস মং ওরপে বিপুল চাকমা, শৈখ্যাইচিং মার্মা, মেহ্লাচিং মার্মা, সাচিংনু মার্মা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেতা নিত্যলাল চাকমা, অজিত চাকমা প্রমুখ।
অপরদিকে,বুধবার ভোর রাত থেকে পিসিজেএসএস নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানে পিসিজেএসএসের জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার সভাপতি উচসিং মার্মাকে আটক করে পুলিশ। তাকে আটক করা হলেও পুলিশ জানিয়েছে তিনি এজাহারভুক্ত আসামী নন। তবে বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে এজাহারভুক্ত আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক লক্ষীপদ দাশ জানান, ঘোষনা অনুযায়ী লাগাতার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ চলবে। সড়ক ও নৌপথ অবরোধ প্রত্যাহার করার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সদর থানার ওসি তদন্ত মো: সাইফুল ইসলাম জানান, আ’লীগ নেতাকে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপহরণের ঘটনায় পিসিজেএসএসের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বুধবার অবরোধ চলাকালীন সময়ে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গেল সোমবার রাত সাড়ে দশটার দিকে সদর উপজেলা জামছড়ি এলাকা থেকে একদল দুর্বৃত্ত অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আ’লীগ নেতা মংপু মার্মাকে অপহরণ করে। কারা তাকে অপহরণ করেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আ’লীগ নেতাদের অভিযোগ আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা তাকে অপহরণ করেছে। এ অপহরণের পেছনে পিসিজেএসএস নেতাদেরও ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেছেন আ’লীগ নেতারা।
তবে আ’লীগ নেতাদের দাবি অস্বীকার করেছেন পিসিজেএসএসের নেতারা। এ ঘটনায় স্থানীয় আ’লীগের নেতারা অপহৃত আ’লীগ নেতাকে সুষ্ঠ শরীরে ফিরিয়ে দেওয়ার এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে অর্নিদিষ্টকালের জন্য লাগাতার সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.