পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক সরকারি নির্দেশনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন(সিএইচটি কমিশন) এ বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
রোববার সিএইচটি কমিশন কমিশনের কো-চেয়ার এরিক এভিব্যুরি, সুলতানা কামাল ও এলসা স্টামাতোপৌলৌ-এর যৌথ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এ উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে।
এ বৈষম্যমূলক বর্ণবাদী সিদ্ধান্তসমূহ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে প্রেস বার্তায় কমিশনের নেতৃবৃন্দ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় গৃহীত চরম বর্ণবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তসমূহ এবং তার ওপর ভিত্তি করে ইস্যুকৃত নির্দেশনাসমূহ অতিসত্তর বাতিল, পার্বত্য ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ধারাসমূহের সংশোধনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া এবং কমিশনের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কর্তৃক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ উপযোগী পরিবেশ সৃিষ্ট করা হোকসহ পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছেন।
প্রেস বার্তায় আরও বলা হয়, গত ২২ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি, সকল দেশি-বিদেশী ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহ সেখানকার আদিবাসীদের সাথে কথা বলা বা সভা করতে গেলে স্থানীয় প্রশাসন বা সেনাবাহিনী বা বিজিবি’র উপস্থিতি নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের নাম থেকে ‘কমিশন’ শব্দটি বাদ দেয়া, চেকপোস্টগুলো সচল করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্মরত আদিবাসী পুলিশ-আনসার সদস্যদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অন্যত্র বদলি করাসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কমিশন এগুলোকে অসাংবিধানিক বৈষম্যমূলক ও পার্বত্য শান্তিচুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক বিবেচনা করে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছে।
প্রেস বার্তায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় বিদেশী নাগরিকগণ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণের জন্য একমাস পূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা সংস্থার ইতিবাচক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের ভ্রমণের অনুমতি প্রদান। এছাড়া বিদেশী কোন সংস্থা বা ব্যক্তি যদি পার্বত্য অঞ্চল ভ্রমণের অনুমতি পানও তাকে সুনির্দিষ্টভাবে ভ্রমণসূচী স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। দেশি-বিদেশি ব্যক্তি বা সংস্থা আদিবাসীদের সাথে কথা বলতে গেলে সেখানে স্থানীয় প্রশাসন বা সেনাবাহিনী বা বিজিবি’র উপস্থিতিতে তাদের কথা বলতে হবে বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত শুধু দেশি-বিদেশি নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপই নয় এটি একটি প্রচ- বর্ণবিদ্বেষী সিদ্ধান্ত, যা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ওপরও বিরাট প্রভাব ফেলবে। সারাদেশের অন্য নাগরিকের সাথে কথা বলা বা সভা করা যাবে অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী আদিবাসীদের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে প্রশাসন বা সেনা-বিজিবি’র উপস্থিতিতে কথা বলার বিষয়টি নিঃসন্দেহে চরম জাতিবিদ্বেষী, বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণের সামিল। এছাড়া যেসব আদিবাসী পরিবারের সদস্যরা আদিবাসী ও বিদেশি তাদের পারিবারিক জীবনের অধিকারও হরণ করা হবে। স্থানীয় জনগণের সাথে সৌর্হাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সেক্টর/ব্যাটালিয়ন/বিওপি ও অন্যান্য স্থাপনার জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শান্তি চুক্তির শর্ত মোতাবেক সংশোধিত পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এ বলা হয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এ আইনের আওতাভূক্ত হবে না। কিন্তু পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমতি ব্যতিরেকে শুধুমাত্র জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনুমতি নিয়ে বিজিবি তাদের সেক্টর, ব্যাটালিয়ন, বিওপি স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছে এবং বেশ কিছু জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ব্যতীত পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য পাহাড়-জমিগুলো আদিবাসীদের প্রথাগত আইনানুসারে যৌথ বা কমন ভুমি। তাই বিজিবির জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে আদিবাসীদের ব্যবহৃত কমন ভুমিতে। এতে করে সেসব এলাকার আদিবাসীরা অনেকে ইতিমধ্যে উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন এবং অনেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
প্রেস বার্তায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, নিরাপত্তার নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে অনেক চেকপোস্ট রয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা কিংবা আদিবাসী নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেসবের অধিকাংশই এইসব চেকপোস্টের দৃষ্টি সীমার মধ্যে সংঘটিত হয়েছে। তাছাড়া সারাদেশে কোন জেলায় প্রবেশের আগে চেকপোস্ট রাখার যেখানে কোন বিধানই নেই সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহে পুলিশ ও আনসারবাহিনীতে যেসব প্রাক্তন শান্তিবাহিনীর সদস্যরা কর্মরত আছেন তাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অন্য জেলায় বদলির ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন শৃঙ্খলা স্থিতাবস্থা বজায় রাখার স্বার্থে যেখানে মিশ্র বাহিনী (আদিবাসী-বাঙালির সংমিশ্রণে) গঠনের ওপর বারবার জোর দেয়া হচ্ছে সেখানে চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মধ্যে আবার আস্থাহীনতা সংকট তৈরি করবে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপি বিগত ১০ বছরে ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সেসবের অগ্রগতি ও ফলাফল প্রেরণের অনুরোধের কথা বলা হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হল ইউএনডিপি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে হাজার হাজার মার্কিন ডলারের প্রকল্পের কাজ করেছে এবং এখনও করছে। এক্ষেত্রে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়টিকে আলাদাভাবে মূল্যায়নের বিষয়টি যথেষ্ট প্রশ্নের দাবি রাখে। সিএইচটি কমিশনের নাম সংশোধন করে ‘কমিশন’ শব্দটি বাদ দিতে বলা হয়েছে। কোন বিধান বলে বেসরকারি কোন সংস্থার নামের সাথে ‘কমিশন’ যুক্ত করা যাবে না সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়নি।
দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকুক সেটি সবার কাম্য উল্লেখ করেপ্রেস বার্তায় বলা হয়, আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নের নামে এভাবে বৈষম্যমূলক, বর্ণবাদী, জাতিবিদ্বেষী সিদ্ধান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে সেখানকার পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ নির্দেশনার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীসহ বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও একটি আঘাত শামিল বলেপ্রেস বার্তায় দাবি করা হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.
সিএইচটি কমিশনের কো-অর্ডিনেটর হানা শামস আহমেদের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি নিচে হুবহু দেয়া গেল---
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক সরকারি নির্দেশনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশন উদ্বিগড়ব: অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহবান
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ঢাকা। গত ২২ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকের(স্মারক-৪.০০.০০০০.০৯.১১.০০১..১৩-১৫, তারিখঃ ২২/০১/২০১৫ খ্রিঃ) মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি, সকল দেশি-বিদেশী ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহ সেখানকার আদিবাসীদের সাথে কথা বলা বা সভা করতে গেলে স্থানীয় প্রশাসন বা সেনাবাহিনী বা বিজিবি’র উপস্থিতি নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের নাম থেকে ‘কমিশন’শব্দটি বাদ দেয়া, চেকপোস্টগুলো সচল করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্মরত আদিবাসী পুলিশ-আনসার সদস্যদের পার্বত্যচট্টগ্রাম থেকে অন্যত্র বদলি করাসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কমিশন এগুলোকে অসাংবিধানিক বৈষম্যমূলক ও পার্বত্য শান্তিচুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক বিবেচনা করে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছে।
৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত ৪ ও ৫ নং নির্দেশনায় যথাক্রমে বলা হয়েছে বিদেশী নাগরিকগণ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণের জন্য একমাস পূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করবেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা সংস্থার ইতিবাচক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের ভ্রমণের অনুমতি প্রদান করা হবে। আর বিদেশী কোন সংস্থা বা ব্যক্তি যদি পার্বত্য অঞ্চল ভ্রমণের অনুমতি পানও তাকে সুনির্দিষ্টভাবে ভ্রমণসূচী স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। এবং দেশি-বিদেশি ব্যক্তি বা সংস্থা আদিবাসীদের সাথে কথা বলতে গেলে সেখানে স্থানীয় প্রশাসন বা সেনাবাহিনী বা বিজিবি’র উপস্থিতিতে তাদের কথা বলতে হবে বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত শুধু দেশি-বিদেশি নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপই নয় এটি একটি প্রচ- বর্ণবিদ্বেষী সিদ্ধান্ত, যা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ওপরও বিরাট প্রভাব ফেলবে। সারাদেশের অন্য নাগরিকের সাথে কথা বলা বা সভা করা যাবে অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী আদিবাসীদের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে প্রশাসন বা সেনা-বিজিবি’র উপস্থিতিতে কথা বলার বিষয়টি নিঃসন্দেহে চরম জাতিবিদ্বেষী, বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণের সামিল। এছাড়া যেসব আদিবাসী পরিবারের সদস্যরা আদিবাসী ও বিদেশি তাদের পারিবারিক জীবনের অধিকারও হরণ করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
৯ নং নির্দেশনায় স্থানীয় জনগণের সাথে সৌর্হাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সেক্টর/ব্যাটালিয়ন/বিওপি ও অন্যান্য স্থাপনার জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শান্তিচুক্তির শর্ত মোতাবেক সংশোধিত পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এ বলা হয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এ আইনের আওতাভূক্ত হবে না। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হল, পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমতি ব্যতিরেকে শুধুমাত্র জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনুমতি নিয়ে বিজিবি তাদের সেক্টর, ব্যাটালিয়ন, বিওপি স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছে এবং বেশ কিছু জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ব্যতীত পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য পাহাড়-জমিগুলো আদিবাসীদের প্রথাগত আইনানুসারে যৌথ বা কমন ভূমি। তাই বিজিবির জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে আদিবাসীদের ব্যবহৃত কমন ভূমিতে। এতে করে সেসব এলাকার আদিবাসীরা অনেকে ইতিমধ্যে উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন এবং অনেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। উক্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় স্থানীয় জনগণের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবির জন্য সেক্টর/ব্যাটালিয়ন/বিওপি ও অন্যান্য স্থাপনার কাজ পরিচালনার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের (সংশোধিত) স্পষ্টত লঙ্ঘন। মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের নির্দেশনায় কমিশন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ১০ নং নির্দেশনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবেশ পথে চেকপোস্ট আরও সক্রিয় করার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, নিরাপত্তার নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে অনেক চেকপোস্ট রয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা কিংবা আদিবাসী নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেসবের অধিকাংশই এইসব চেকপোস্টের দৃষ্টি সীমার মধ্যে সংঘটিত হয়েছে। যেমন সাম্প্রতিক নানিয়াচরের বগাছড়ির ঘটনায়ও সেনাক্যাম্পসহ চেকপোস্ট নিকটে থাকা সত্বেও আদিবাসীদের গ্রামে অগিড়বসংযোগ ও লুটপাতের ঘটনা ঘটেছে। তাই নিরাপত্তার নামে যে চেকপোস্টগুলো আছে সেগুলো যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের নিরাপত্তা বিধানের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে অনির্দিষ্ট করে তা বিগত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে। তাছাড়া সারাদেশে কোন জেলায় প্রবেশের আগে চেকপোস্ট রাখার যেখানে কোন বিধানই নেই সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
১১ নং নির্দেশনায় পার্বত্য জেলাসমূহে পুলিশ ও আনসারবাহিনীতে যেসব প্রাক্তন শান্তিবাহিনীর সদস্যরা কর্মরত আছেন তাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অন্য জেলায় বদলির ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন শৃঙ্খলা স্থিতাবস্থা বজায় রাখার স্বার্থে যেখানে মিশ্র বাহিনী (আদিবাসী-বাঙালির সংমিশ্রণে) গঠনের ওপর বারবার জোর দেয়া হচ্ছে সেখানে চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মধ্যে আবার আস্থাহীনতা সংকট তৈরি করবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় গৃহীত অন্যান্য সিদ্ধান্তের আরেকটি হল, পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপি বিগত ১০ বছরে ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে উনড়বয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সেসবের অগ্রগতি ও ফলাফল প্রেরণের অনুরোধের কথা বলা হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হল ইউএনডিপি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে হাজার হাজার মার্কিন ডলারের প্রকল্পের কাজ করেছে এবং এখনও করছে। এক্ষেত্রে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়টিকে আলাদাভাবে মূল্যায়নের বিষয়টি যথেষ্ট প্রশ্নের দাবি রাখে।
৩ নং নির্দেশনায় সিএইচটি কমিশনের নাম সংশোধন করে ‘কমিশন’ শব্দটি বাদ দিতে বলা হয়েছে। কোন বিধান বলে বেসরকারি কোন সংস্থার নামের সাথে ‘কমিশন’ যুক্ত করা যাবে না সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে ইতিপূর্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির গণ-তদন্ত কমিশন বা বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কমিশনসহ বিভিন্ন ধরনের কমিশন গঠিত হলেও সেসব সংস্থাসমূহের নাম পরিবর্তনে বা ‘কমিশন’ শব্দটি বাদ দেয়ার উদ্যোগ কোন মন্ত্রণালয় নেয়নি। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের নাম সংশোধনের নির্দেশনায় কমিশন বিস্ময় প্রকাশ করছে। উল্লেখখিত সভাটি বিজিবি’র একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে এবং ‘আইন শৃঙ্খলা উন্নয়ন ও সার্বভৌমত্বে’র প্রশ্নের ডাকা হয়েছিল। শান্তি চুক্তি অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আঞ্চলিক পরিষদের মতামত গ্রহণের কথা বলা হলেও এ বিষয়ে আঞ্চলিক পরিষদের মতামত নেয়া হয়নি। দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকুক সেটি সবার কাম্য। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা উনড়বয়নের নামে এভাবে বৈষম্যমূলক, বর্ণবাদী, জাতিবিদ্বেষী সিদ্ধান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে সেখানকার পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই নির্দেশনার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীসহ বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও একটি আঘাত। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন এই বৈষম্যমূলক বর্ণবাদী সিদ্ধান্তসমূহ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে নিম্নোক্ত সুপারিশমালা পেশ করছে-
* স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় গৃহীত চরম বর্ণবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তসমূহ এবং তার ওপর ভিত্তি করে ইস্যুকৃত নির্দেশনাসমূহ অতিসত্তর বাতিল করা হোক।
* পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ধারাসমূহের সংশোধনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হোক এবং কমিশনের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কর্তৃক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক।
* পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে।
ধন্যবাদসহ,
এরিক এভিব্যুরি সুলতানা কামাল এলসা স্টামাতোপৌলৌ
কো-চেয়ার কো-চেয়ার কো-চেয়ার
পার্বত্য চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম
আন্তর্জাতিক কমিশন আন্তর্জাতিক কমিশন আন্তর্জাতিক কমিশন
সদস্য: স্বপন আদনান, লারস এন্ডারস বেয়ার, টোনা ব্লাই, হার্স্ট হেনাম, ইয়াসমিন হক, সারা হোসেন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, মির্না কানিংহাম কেইন, খুশী কবির, মাইকেল সি ভন ওয়াল্ট প্রাগ, ইফতেখারুজ্জামান।
উপদেষ্টা: ইয়েনেকি এরেঞ্জ, টম এস্কিলসন, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা।