বান্দরবানে আট লক্ষ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ১৪ বছরের এক শিশু কন্যাকে বিবাহ করতে গিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে ৬০ বছরের বরকে আটক করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। তার নাম নুরুল হুদা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের একটি দল বান্দরবান পৌর এলাকার ক্যচিংঘাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাল্য বিবাহের অভিযোগে ৬০বছরের বৃদ্ধ বর নুরুল হুদাকে আটক করে সদর থানায় নিয়া যাওয়া হয়েছে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় বৃদ্ধ বর নুরুল হুদা একই শিশু কন্যাকে বিয়ে করতে গিয়ে ডিবি পুলিশির অভিযান এবং স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে বিবাহ পন্ড হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান,বাল্য বিবাহের অভিযোগে নুরুল হুদা নামে প্রায় ৬০ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তবে কনের বয়স প্রাথমিক ভাবে ১৪/১৫ বছর হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কনের বয়স যাচাই বাচাই শেষে দোষী প্রমানিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, ক্যচিং ঘাট এলাকার বাসিন্দা মৃত আবুল বাশারের স্ত্রী ছেনু আরা বেগম এবং বড় ছেলে শাহজাহান সৌদি প্রবাসী নুরুল হুদা নামে ৬০ বছর বয়স্ক এব বৃদ্ধের কাছ থেকে আট লক্ষ টাকা নিয়ে বান্দরবান সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীতে পড়–য়া শাহনাজ আক্তার মুন্নিকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়।
বাল্য বিবাহের খবর পেয়ে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ডিবি পুলিশের একটি দল বিবাহ অনুষ্ঠানস্থল ঘেরাও করলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বর নুরুল হুদ,কাজী সাহেব ও উভয় পক্ষের লোকজন পালিয়ে যায়।
স্থানীয় আবুল কালাম,জাফর,মোজাফ্ফর জানান,স্থানীয়দের প্রতিবাদ করার সত্বেও উভয় পক্ষ এ বিয়ে চালিয়ে যেতে সম্মত হয় ।
স্কুল ছাত্রীর মা ও বড় ভাই মোটা অংকের টাকার প্রলোভন পেয়ে ৬০ বছরের বৃদ্ধ সৌদি প্রবাসীকে চৌদ্দ বছরের মেয়ে বিবাহ দিচ্ছে। তারা আরও জানান,বর নুরুল হুদার সৌদি আরবে একটিসহ বর্তমানে কয়েকটি এলাকায় তার মোট ৪টি স্ত্রী রয়েছে। সৌদি আরবের সংসারে তিনি দুটি মেয়ে বিবাহ দিয়েছেন। গত ১/১১ এর সময় আরএসও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী তাকে আটকও করে।
বালাঘাটার বাসিন্দা আহাম্মদ ছফা,আবু তাহের ও আব্দুল করিম জানান,সৌদি প্রবাসী নুরুল হুদা তার বাড়ী কক্রবাজার টেকনাফের হ্নীলা দাবী করলেও মুলত সে রোহিঙ্গা। বেশ কিছু বছর আগে তার বাবাসহ স্বপরিবারে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে হ্নীলায় আশ্রয় নেয়। গত দুই বছর আগে এক স্ত্রীকে নিয়ে বালাঘাটায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন তিনি। পরে ভুয়া কাগজ পত্র এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বোমাং রাজার সনদ নিয়ে অবৈধভাবে বালাঘাটা শৈলসভা মাঠ সংলগ্ন এলাকায় প্রায় কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন। সেই জমিতে ঘর নির্মান করে গত ৩মাস ধরে তিন উক্ত ঘরে বসবাস করে আসছেন। এতিম ও অসহায় পরিবারকে লাখ টাকার প্রলোভন দিয়ে একের পর এক মেয়ে বিবাহ করা নুরুল হুদার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
এ ব্যপারে নুরুল হুদা বর্তমানে তার দুই স্ত্রী থাকার কথা স্বীকার করে বলেন,আট লক্ষ টাকা নগদ দিয়ে আমি মেয়েটিকে বিবাহ করতে চেয়ে ছিলাম। যেহেতু মেয়েটি রাজি হয়েছে তাই সেখানে ৬০ বছর আর ১৪ বছর কোন ব্যাপার না। তিনি রোহিঙ্গা নাগরিকের বিষয়টি অস্বীকার করলেও তবে কোন এলাকার বাসিন্দা সঠিক কোন উত্তর দেননি।
স্কুল ছাত্রীর বড় ভাই শাহজাহান আট লাখ টাকার বিনিময়ে তার বোন বিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,আমার বোন সব কিছু জেনে শুনে আমাদের কথামত এ বিয়েতে রাজি হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.