হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার অবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সোমবার ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন(সিএইচটি) সংবাদ সন্মেলন করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক কমিশন সমন্বয়কারী হানা শামস আহমেদের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়,জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সন্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশণ কমিশনের কো-চেয়ার সুলতানা কামাল, কমিশনের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান ও কমিশনের বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েটের সমন্বয়কারী হানা শামস আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিশনের কো-চেয়ার সুলতানা কামাল। বক্তব্য রাখেন কমিশনের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান। পরে কমিশনের নেতৃব্দৃ সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা পুনঃতদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৬ জানুয়ারী ২০১৩ সালে রাঙামাটির চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাঙামাটি পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। ২০ জুলাই ২০১৪ সালে তদন্ত কর্মকর্তা রাঙামাটির তৎকালীন পুলিশ সুপার আমেনা বেগম তদন্ত অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে তিনি বলেন, “বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ মতে লেঃ ফেরদৌস এবং ভিডিপি সদস্য নূরুল হক ও ছালেহ আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের জবানবন্দির আলোকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। ঘটনার ১৮ বছর পরে ভিকটিমের চেহারায় অনেক পরিবর্তন হতে পারে। তাই অদূর ভবিষ্যতে তাকে উদ্ধার করা হলেও চেহারা দেখে শনাক্ত করা নাও যেতে পারে। কল্পনার ভাইয়েরা বৃদ্ধ বিধায় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হলে তাকে চিহ্নিত করার জন্য তার ভাইদের ডিএনএ সংগ্রহের জন্য আদালতের নির্দেশপ্রাপ্ত হলেও মামলার বাদী ও তার ভাই লাল বিহারী চাকমা ডিএনএ সংরক্ষণের জন্য আগ্রহী নয় বিধায় তা সংগ্রহ করা হয়নি। যেহেতু এই মামলার মূল স্বাক্ষী ভিকটিম কল্পনা চাকমা নিজেই, তাই উক্ত কল্পনা চাকমা উদ্ধার না হওয়া কিংবা তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত মামলার তদন্ত শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কল্পনা দুই ভাই কালিন্দী কুমারের সাক্ষ্য নিলেও আরেক ভাই লালবিহারী চাকমার সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। এমনকি তদন্ত কর্মকর্তা কি কারণে কল্পনা চাকমার দুই ভাইয়ের ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেছিল তাও পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের কাছে পরিস্কার নয়। ১৬ জানুয়ারী ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছানো হয়েছে।
কল্পনা চাকমা অপহরণের ১৯ বছর পরও রাষ্ট্র এখনও কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। মামলা করার প্রায় সাড়ে চৌদ্দ বছর পর ২১ মে২০১০সালে বাঘাইছড়ি থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথম চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা এ প্রতিবেদনের ওপর নারাজী দিলে বিজ্ঞ আদালত ২ সেপেস্টম্বর ২০১০ সালে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডি’র তদন্ত কর্মকর্তা দুইবছর তদন্ত করে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে তার তদন্তÍ প্রতিবেদন দাখিল করেন। সিআইডি’র তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর বাদী নারাজী দিলে বিজ্ঞ আদালত ১৬ জানুয়ারী ২০১৩ সালে আরও অধিকতর তদন্তের জন্য রাঙামাটির পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। তৃতীয়বারের মত মামলাটির তদন্ত কাজ চলছে। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ২২ বার পেছানো হয়েছে বলে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে।
সংবাদ সন্মেলনে কমিশনের নেতৃবৃন্দ বলেন, তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট, বাঘাইছড়ির থানার পুলিশ এবং সিআইডি এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ৩টি প্রতিবেদনের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা উৎঘাটিত না হওয়ার কারণে অপরাধিদের দায়মুক্তি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরাধীরা বারবার অপরাধ সংঘটনে সাহস পাচ্ছে। কল্পনার অপহরণ মামলার মতো বিচারের আশায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু অন্য নারী নির্যাতন মামলা আছে যেগুলো বছরের পর বছর ঝুলে আছে। কিন্তু এ দায়মু্িক্ত এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে অপরাধীরা বারবার অপরাধ সংঘটনে সাহস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে আরও যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন।
সংবাদ সন্মেলন চার দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হল, অবিলম্বে মামলার তদন্ত কাজ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল,কল্পনা চাকমার অবস্থা সম্পর্কে জানতে অভিযুক্তদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ,আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক পুনঃতদন্ত কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে স্বচ্ছতার সাথে উপস্থাপন করা হোক এবং প্রতিবেদনে ডিএনএ টেস্ট এর ন্যায় অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে সামনে এনে মামলা সংশ্লিষ্টদের বিভ্রান্ত না করার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং এ মামলার তদন্তকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি মনিটর সেল গঠন করা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাইল্যাঘোনা গ্রাম থেকে অজ্ঞাতনামা দৃস্কৃতকারীরা অপহরন করে নিয়ে যায়। অবশ্যই কল্পনা চাকমার পরিবার ও তার সংগঠনের পক্ষ থেকে সেনা বাহিনীর লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসকে দায়ী করেছিল। সরকার জনমতের চাপের মুখে একটি বিচার বিভাগীয় কমিটির গঠন করলেও রিপোর্ট আজও প্রকাশিত হয়নি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.