পার্বত্যাঞ্চলে নারী হেডম্যান-কার্বারী ও নারী উন্নয়ন কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে ৪সেপ্টেম্বর থেকে ৫ দিন ব্যাপী রাঙামাটিতে প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়েছে।
এএলআরডি’র আয়োজনে শুধু নারী হেডম্যান, কার্বারী এবং নারী উন্নয়ন কর্মীদের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনায় নারী হেডম্যান এবং কার্বারীদের দক্ষতা উন্নয়ন করা। যাতে করে তারা নিজ নিজ এলাকায় মানুষের ভূমির সমস্যার পাশাপাশি সামাজিক অন্যান্য সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করার করতে পারে।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা টংগ্যার হল রুমে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের আয়োজনে এবং এএলআরডি’র সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অন্ষ্ঠুানে উপস্থিত ছিলেন সিএইচটি নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক থোয়াই অং মার্মা এএলআরডি’র প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম এবং মির্জা মো: আজিম হায়দার। প্রশিক্ষণ কোর্সের আলোচক ছিলেন চাকমা সার্কেলের রানী য়েন য়েন, এ্যাডভোকেট দ্বীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, এ্যাড. রাজিব চাকমা, এ্যাড. ভবতোষ দেওয়ান, এ্যাড. রনবির চাকমা, শক্তি পদ ত্রিপুরা, শান্তি বিজয় চাকমা, থোয়াই অং মার্মা, নারী নেত্রী টুকু তালুকদার, মো: সফিকুল ইসলাম এবং মির্জা মোঃ আজিম হায়দার।
৫ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিন পার্বত্য অঞ্চল থেকে ২৮ জন নারী প্রথাগত নারী নেতৃত্ব এবং স্থানীয় এনজিও কর্মীরা অংশগ্রহণ করেছেন।
অংশগ্রহণকারী বলেন, এ প্রশিক্ষন কর্মশালায় পার্বত্যাঞ্চলের নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি অধিকারসহ অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বক্তারা আরও বলেন, এ প্রশিক্ষণ কোর্স শেষে কর্ম এলাকায় ফিরে গিয়ে তারা স্ব স্ব মৌজায়, পাড়ায় পুরুষের পাশাপাশি কাজ করতে পারবেন। হেডম্যান এবং কার্বারীদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে জানার মাধ্যমে তাদের কাজের ক্ষেত্রে আরো আগ্রহ বেশী সৃষ্টি হয়েছে। নারী হেডম্যান কার্বারীদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারী পরিষদের নারী মেম্বার এবং নারী এনজিও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ জানান তারা। এসময় প্রশিক্ষনার্থীরা প্রতিটি এলাকায় নারীদের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
আয়োজক কমিটির সূত্রে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্দেশ্য হচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের পুরুষ হেডম্যান কার্বারীদের পাশাপাশি নারী হেডম্যান কার্বারীদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ত করা। সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় হেডম্যান এবং কার্বারীগণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাই তাদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে আরো দক্ষ করে তোলা। তিন পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থপনার সাথে নারী হেডম্যান, কার্বারী এবং স্থানীয় এনজিও নারী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন করে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে সহায়তা করা।
সূত্র আরও জানায়, ১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তির পরবর্তীতে বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনগুলো তিন পার্বত্য জেলায় উন্নয়ন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এএলআরডি তিন পার্বত্য জেলায় প্রথাগত নেতাদের (হেডম্যান এবং কার্বারীদের) পার্বত্য ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। এই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সভা সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে ২০০৩ সালে প্রথম কোর্সের বিষয়বস্তু নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালা থেকে কোর্সের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয় এবং কোর্সের কারিকুলাম উন্নয়ন করা হয়। পরবর্তীতে ধারাবাহিক ভাবে হেডম্যান এবং কার্বারীদের ভূমি ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং পার্বত্য ভূমি ব্যবস্থাপনা হেডম্যান এবং কার্বারীদের নেতৃত্ব উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ২০১১ সালে তিন পার্বত্য জেলায় হেডম্যান সমন্বয়ে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক গঠিত হয়। প্রথম দিকে নারী হেডম্যান বেশী থাকলেও পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ-এর সফলতায় যোগ্যতা অনুযায়ী পরিবার থেকে নারীদেরকেও হেডম্যান এবং কার্বারী হিসাবে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রশিক্ষণের সফলতায় আস্তে আস্তে নারী হেডম্যান এবং কার্বারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০১৪ সালে রাঙামাটি চাকমা সার্কেলে এক সাথে ১১০ জনকে নারী কার্বারী হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। যা নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধির এক ধাপ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। গেল। ধীরে ধীরে অন্য দুই পার্বত্য জেলাতেও নারী কার্বারী নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় আসতে শুরু করেছে।
এএলআরডি’র সূত্রে জানা গেছে, এলআরডি’র পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাগুলোও নারী হেডম্যান কার্বারীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলায় নারী হেডম্যান এবং কার্বারীদের সমন্বয়ে নারী হেডম্যান ও কার্বারী নেটওয়ার্ক-এর একটি আহবায়ক কমিটি হয়েছে। ইতোমধ্যে নারী হেডম্যান ও কার্বারীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য গত ১১-১৫ জুন, বান্দরবানে প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্ত হয়েছে। কোর্সে পুরুষ হেডম্যান ও কার্বারীর পাশাপাশি ১৬ জন নারী হেডম্যান এবং কার্বারী অংশগ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে ২৫-২৯ জুন রাাঙামাটিতে প্রশিক্ষন কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ওই কোর্সে ১৪ জন নারী হেডম্যান এবং কার্বারী অংশ নিয়েছেন।
অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিষদের সহযোগিতায় ও মানুষের জন্য ফান্ড-এর আর্থিক সহায়তায় এবং সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের উদ্যোগে ২৩-২৫ আগষ্ট নারী হেডম্যান এবং কার্বারীদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.