মঙ্গলবার রাঙামাটিতে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গণ সচেতনামূলক শীর্ষক দিন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, দেশের ৬১টি জেলায় পারিবারিক আদালতের কার্যক্রম থাকলেও তিন পার্বত্য জেলায় পারিবারিক আদালতের কার্যক্রম নেই। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব, ভরনপোষনসহ ইত্যাদি উদ্ভুত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইনের মামলা আদালতের মাধ্যমে নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বক্তারা আরও বলেন, রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ধর্ষন, নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ঘটনার বিচার ও প্রতিকারে আইন সহায়তা কেন্দ্রের বিষয়ে স্থানীয়দের সঠিক তথ্য জানা থাকলে এবং গণ সচেতনা বৃদ্ধি করা গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিষ্টিউট মিলায়তনে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট(ব্লাষ্ট) রাঙামাটি ইউনিটের উদ্যোগে এবং ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও ইউরোপিয়ানের উদ্যোগে আয়োজিত দিন ব্যাপী কর্মশালায় উদ্ধোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন ২৯৯ নং আসনের সাংসদ উষাতন তালুকদার। ব্লাষ্ট রাঙামাটি ইউনিটের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ্যাড. পরিতোষ দত্তের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ-এর প্রকল্পের সহকারী পরিচালক প্রজেনজিৎ চাকমা ও নারী নেত্রী টুকু তালুকদার। আলোচক ছিলেন রাঙামাটি সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সিআর দত্ত, এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, এ্যাড.সৌরভ দেওয়ান। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন ব্লাষ্ট রাঙামাটি ইউনিটের সমন্বয়কারী এ্যাড. জুয়েল দেওয়ান।
সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ শামস উদ্দীন খালেদ। দিন ব্যাপী এ সচেতনামূলক কর্মশালায় ব্লাষ্টের সুবিধাভোগীরা ছাড়াও নারী অধিকার কর্মীরা অংশ নেন।
দিন ব্যাপী কর্মশালায় সাম্প্রতিক নারীর প্রতি সহিংসতা ও ঘটনা এবং কারণসমূহ,জেন্ডার প্রেক্ষাপট পার্বত্য চট্টগ্রাম, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইনের উপর আলোচনা, পারিবারিক সহিংসতার প্রতিরোধ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩), বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, নারীর প্রতি সহিংসতা মামলা সমুহের পর্যালোচনা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ তুণমূল পর্যায়ে অধিকার কর্মীদের করনীয় ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্য়ক্রমের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার এমপি সমাজের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বারোপ করে বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক গণ সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের গ্রামে-গঞ্জে সকল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এ গণ সচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। এ অঞ্চরের অরাজগতা বা সমস্যাকে জিইয়ে রেখে যাতে এখানে কেউই অশান্তি সৃষ্টি না করে এবং সকল সম্প্রদায় যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে জন্য সবাইকে খেয়াল করারও তিনি অনুরোধ জানান।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের যারা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকুরী করতে আসেন তাদের প্রথাগত রীতিনীতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন নিয়ে সচেতনামূলক ওরিয়েটশনের দরকার।
তিনি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে শুধু সাংসদকে বলতে হবে তা নয়। এ দায়িত্ব শুধু জনপ্রতিনিধিদের নয়। সবার দায়িত্ব রয়েছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে রাঙামাটির বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ শামস উদ্দীন খালেদ বলেন, পারিবারিক আদালতের বিষয়ে জেলার ৬১টি জেলায় স্থাপন করা হলেও তিন পার্বত্য জেলায় পারিবারিক আদালত নেই। তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন করতে হলে আগে নিজেকে সচেতন করতে হবে। তাই অভিজ্ঞতার বিনিময় প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাঙামাটিতে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা মোকাবেলা করার জন্য এখানে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু রয়েছে। তবে লংগদু উপজেলায় ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার(ওসিসি) চালু রয়েছে বলে আজকে তা পারলাম বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কর্মশালায় অংশ গ্রহনকারীদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বলেন, ধর্ষনসহ চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সাধারনত মামলা দীর্ঘ দিন ধরে চলার কারণে সাক্ষী পাওয়া না যাওয়ার কারনে মামলা দীর্ঘ স্থায়ী হয়ে থাকে। এছাড়া রাঙামাটিতে জজ আদালত ও জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম আলাদা রয়েছে। যদিও প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধরন একই। বর্তমানে রাঙামাটিতে একটি ভবনেই বিচারিক কার্যক্রম চলছে। উপরন্তু এখানে রয়েছে বিচারকের স্বপ্লতা। একজন বিচারকের পিছনে কয়েক হাজার মামলা পড়ে থাকে। তার উপর বিচারকের ভবনসহ আবাসনের সংকট রয়েছে।
আলোচক বক্তব্যে এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন,দেশের অনান্য স্থানে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতের কার্যক্রম থাকলেও তিন পার্বত্য জেলায় পারিবারিক আদালতের কার্যক্রম নেই। তবে পাহাড়ী সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রথাগত রাজ আদালত, অথবা হেডম্যান ও কারবারী আদালতে পারিবারিক আইনের মিমাংসা করা হয়ে থাকে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.