পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন,ব্রিটিশ আমল থেকে বর্তমান বাংলাদেশ শাসনামল পর্ষন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ আমলের রেখে যাওয়া ১৯০০ সালের শাসনবিধি দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের বুকে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে বদ্ধ পরিকর।
মঙ্গলবার রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত দুদিন ব্যাপী প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী হেডম্যান-কারবারী সন্মেলনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এ কথা বলেন।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের উদ্যোগে ও ইউএনডিপি-সিএইচডিএফের সহযোগিতায় সন্মেলনের উদ্ধোধক ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, বরকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনি চাকমা, এএলআরডি-এর উপ-পরিচালক রওশন জাহান মনি ও ইউএনডিপি-সিএইচডিএফের উপ-পরিচালক প্রসেনজিৎ চাকমা। বক্তব্যে রাখেন সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা ও নারী হেডম্যাদের পক্ষ থেকে শান্তনা চাকমা। এর আগে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে দুদিন ব্যাপী সন্মেলনের উদ্ধোধন করেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়।
সন্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা থেকে চাকমা সার্কেলের ১২ জন নারী হেডম্যানসহ মোট ১শ৪৭ জন নারী কারবারী অংশ নেন। এছাড়া পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রায় দু’শ জন পুরুষ হেডম্যান-কারবারী অংশ গ্রহন করেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা আরও বলেন,পার্বত্যাঞ্চলের বুকে দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফলে স্বীকৃত পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তির আলোকে বিশেষ শাসন ব্যবস্থার জন্য আইন প্রনীত হলেও কিন্তু সেই আইন অকার্যকর অবস্থায় রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্বে অর্থাৎ পাকিস্তানের আমলে নারীদের অবস্থা তেমন ভালো ছিল না, নারী শিক্ষা থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়েছে। পরর্বতী সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারনে নারীরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে । অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন শোষন বঞ্চনা এবং জাতীয় পর্যায়ে শাসন ব্যবস্থা,স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার কারনে নারী সমাজ এগিয়ে যেতে পারেনি।
তিনি নারী হেডম্যান ও কারবারীদের রাজনীতি সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নারীদের অধিাকারের জন্য রাজনীতি করতে হবে যে রাজনীতি হবে প্রগতিশীল এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তিনি পার্বত্যাঞ্চলের বুকে আত্ননিয়ন্ত্রনাধিকার, রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে নারী সমাজ তথা নারী হেডম্যান-কারবারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
উদ্ধোধকের বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যরিষ্টার রাজা দেবাশীষ রায় বলেন,প্রথাগত আইনের বিশেষ শাসন ব্যবস্থায় প্রচলিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। এখানে হেডম্যান-কারবারী জনগনের সেবা করার সুযোগ রয়েছে, তাদের কাযর্কলাপ অবশ্যই জনকল্যাণমূখী হতে হবে । তিনি বলেন, প্রথাগত যে আইন রয়েছে তা পরিবর্তন শীল এবং জনস্বার্থ বিরোধী হলে তা সংশোধন করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে নারী আন্দোলনের সফলতা লাভ করতে না পারলে স্বাভাবিকভাবে নারী হেডম্যান-কারবারীদের ভূমিকা ততটা এগিয়ে যেতে পারবে না। এ জন্য নারী হেডম্যান-কারবারীদের প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে হলেও পুরুষদের চাইতে নারীদের দক্ষ হিসেবে প্রমাণ করতে হবে।
তিনি বলেন, চাকমা সমাজ ব্যবস্থায় বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনের ব্যাপারে প্রচলিত রাষ্টীয় আইনের দলিল প্রয়োজন নেই, সেখানে সমাজিক স্বীকৃতিরই প্রধান ।
তিনি আরও বলেন কাগজের দলিল কাছে ঐতিহাসিক প্রথা বিলুপ্ত হতে পারে না । যদি কোন কারনে বিবাহিত সনদপত্র লাগে তাতে চাকমা সার্কেল চীফ সনদপত্র দিতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি নারী হেডম্যান-কারবারীদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও বিচারিক কার্যক্রমে আরও বেশী করে অংশ গ্রহনসহ উন্নয়নমূলক কাজে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.