অাগামী ২৩ এপ্রিল রাঙামাটিতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের পূর্বে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরতে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে চিরুনী অভিযানের দাবী জানিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগ।
রোববার শহরের জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এ দাবী জানান।
সংবাদ সন্মেলনে এ সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, চিংকিউ রোয়াজা, রুহল আমীনসহ জেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দীপংকর তালুকদার তার লিখিত ব্ক্তব্যে আরো বলেন, রাঙামাটি জেলার ৪৯টি ইউনিয়ন পরিষদের সবকটিতে আগামী ২৩ এপ্রিল ২০১৬ তৃতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বরাবরের মতো আবারও শুরু হয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর অপতৎপরতা। তাদের মনোনীত ও সমর্থিত প্রার্থী ব্যতিরেকে অন্য কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না বলে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় জানিয়ে দিচ্ছে তারা।
তিনি বলেন, রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি জেলা সংগঠন। এটি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আয়োজিত প্রত্যেক নির্বাচনে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ অংশ গ্রহণ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ।
কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক দলের হুমকির কারণে ইতিমধ্যে রাঙামাটি আওয়ামী লীগের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানরা দলীয় সমর্থনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দলীয় প্রতীক নিয়ে কাউকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না বলে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের কথার বাইরে কেউ নির্বাচন করলে অন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুমকি হচ্ছে। এ কারণে রাঙামাটি ৪৯ টি ইউনিয়নের ৩০টি ইউনিয়ন বাদে বাকী ১৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ কোন দলীয় প্রার্থী দিতে পারছেন না।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হুমকিতে ভীত হয়ে অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদে অাওয়ামীলীগের অনেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এমনকি অাওয়ামীলীগের দলীয় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানরা পর্যন্ত ভয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো এভাবে তৎপর হয়ে ওঠে। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা সফল হয়। বিগত জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনেও এভাবে বিজয়ী হয়ে তাদের মধ্যে আরো দুঃসাহস ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে যে অস্ত্রের জোরে জয় লাভ করা খুবই সহজ।
তিনি বলেন, বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় তারা তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও দূরবর্তী ও দুর্গম পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকায় অস্ত্রের জোরে তারা প্রায় শতভাগ সফল হয়ে আসছে। এজন্য নির্বাচনের সময় হলে তারা পাহাড়ি অধ্যুষিত নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বেশী অস্ত্রবাজি চালাতে উৎসাহী হয়ে থাকে। ফলে রাঙামাটিতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
তিনি আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপুর্ণ করতে এ ৫ দফা দাবী পেশ করেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। এসেগুলো হল,স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রের জোরে তাদের নিয়ন্ত্রিত ভোট কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট বা ভোটাররা প্রায় নির্বিঘ্নে জাল ভোট দিতে পারে। ভোটারদের সাথে আইডি কার্ড রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলে এই জাল ভোট প্রদান অনেকাংশে রোধ করা যাবে। ভোটার আইডি কার্ড এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। আইডি কার্ড দেখাতে পারলেই কেবল ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের ব্যালট পেপার দেয়া যাবে। তাই ভোটারদের সাথে ভোটার আইডি কার্ড রাখা বাধ্যতামূলক করা দরকার, ভোটাররা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে কিনা মোবাইলের মাধ্যমে ছবি তুলে তার প্রমাণ দিতে হয়। এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধ করতে সেলফোন বা মোবাইল ফোন সেট ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে হবে,ভোটকেন্দ্র কাঁচা বাড়ি হলে পোলিং বুথের এক পাশে গিয়ে সহজে ছিদ্র করে কে কোথায় ভোট প্রয়োগ করছেন তা সঙ্গোপনে উঁকি মেরে দেখে থাকে সন্ত্রাসীরা। নির্দেশিত প্রতীকে ভোট না দিলে পরে সেই ভোটারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় সন্ত্রাসীরা। তাই ভোটকেন্দ্র কাঁচাবাড়ির হলে পোলিং বুথসমূহ মোটা কাপড় দ্বারা আচ্ছাদিত করতে হবে এবং সেই বুথের কাছাকাছি কাউকে যেতে দেওয়া যাবে না, কয়েকটি উপজেলার দুর্গম ভোট কেন্দ্রে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অন্য কোন দলের বা প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয় না।
পোলিং বুথ থেকে অন্য প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত জাল ভোট প্রয়োগ করে থাকে। অস্ত্রের মুখে সেখানকার রিটার্নিং ও পোলিং অফিসার বা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহায় হয়ে পড়েন। তাই দূরবর্তী ও দুর্গম পোলিং সেন্টারগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সর্বোপরি নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরতে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে চিরুণী অভিযান চালানোর জন্য জোর দাবী জানানো হচ্ছে যাতে করে আগামী সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয় এবং পার্বত্য জনগণ যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
সংবাদ সন্মেলেন তাকে ফেইসবুকে হুমকি দেয়ার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "মৃতূকে তিনি পরোয়া করেন না। কে কাকে হুমকি দিল তার পরোয়া আমি করিনা। এক দিন জন্মেছি, এক দিনই মরতে হবে।"
তিনি এ অবৈধ অস্ত্রধারী ও চাদাবাজীসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধের জন্য সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে বলেন, আগামী ২৪ মার্চ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, খুন, অপহরণ, গুম চাদাবাজী ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে বিক্ষোভ-সমাবেশ করা হয়েছে। এখানে রাজনীতিকে সম্পুক্ত করা হয়নি।
ফেইসবুকে দীপংকরকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় প্রতিবাদ ও নিন্দাঃ
একই সংবাদ সন্মেলনে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের "সিএইচটি জুমল্যাল্ড" নামের একটি আইডি থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সারেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ওই আইডি বন্ধে ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবী জানান। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে কঠোর আন্দোলনের দিতে বাধ্য হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.