রাঙামাটির বরকলে বিজিবি কর্তৃক আটক এক ভূঁয়া সেনা কর্মকর্তা ও ৩ বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সরকারী গোপন আইনে থানায় মামলা দায়ের পর শনিবার তাদের আদালতে তোলা হয়েছে।
চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আটককৃতদের হাজির করা করে পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন কবিরের আদালত রোববার মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করে আটককৃতদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ১২ জনের একটি দল রাঙামাটির বরকল সদরের সবচেয়ে উচু পাহাড় এসএস টিলায় (ফালিট্যাংঙা চুগ) বেড়াতে যান। এতে দলের মধ্যে থেকে বিভাষ দেওয়ান নামের একজন সেখানকার বিজিবি ক্যাম্পে ক্যাম্প কমান্ডারকে নিজেকে একজন সেকেন্ড ল্যাপ্টেন্যান্ট পরিচয় দেন। এতে বিজিবি ক্যাম্পে তাদেরকে বেশ অপ্যায়নও করেন। পরে পাহাড়ের চুড়া থেকে নেমে আসার সময় তাদের গতিবিধি ও আচরণ সন্দেহজনক হলে বিজিবি’র বরকল জোনে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এতে যাওয়ার পথে গিরিছড়া নামক ক্যাম্পে বিজিবির সদস্যরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে এক পর্যায়ে ভূঁয়া সেনা কর্মকর্তা পরিচয় নিশ্চিত হলে ১২ জনকে আটক করে গত শুক্রবার রাতে বরকল পুলিশের কাছে সোপর্দ করে বিজিবি।
আটকৃতরা হলেন, রাঙামাটির রাজবন বিহারের শান্তপ্রিয় স্থবির (৩৮) গ্রীমানন্দ ভিক্ষু(৩৫) বুদ্ধ জ্যোতি শ্রমণ (২০), ভূয়াঁ সেনা কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী বিভাষ দেওয়ান(২১), পিতা- বিনয় কৃঞ্চ দেওয়ান(বিকে দেওয়ান) মাতা-কণিকা দেওয়ান রাঙামাটির বিজন স্মরণী,রিটেন চাকমা (২২) পিতা-নিহার বিন্দু চাকমা মাতা-ঊষাদেবী চাকমা, পিটিআই রাঙামাটি, সুনীতি বিকাশ চাকমা (২৩) পিতা- জগৎ চন্দ্র চাকমা, মাতা-কালাচোগি চাকমা তংতুল্লে বন্দুক ভাঙ্গা,রাঙামাটি, রিপেন চাকমা (২২) পিতা-নয়ন বিকাশ চাকমা,উত্তর সার্বোতুলি বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি, রিগেন চাকমা (১৮) পিতা-সুরেন ময় চাকমা, নানিয়ারচর রাঙামাটি, ছন্দসেন চাকমা (৩৯),পিতা-প্রতাপ চন্দ্র চাকমা,রাজদ্বীপ রাঙামাটি সদর, মুক্তবীর চাকমা (২২) পিতা-প্রদীপ কুমার চাকমা. ছোট্ট কাট্টলী লংগদু,রাঙামাটি, রুহিত চাকমা (২১) পিতা-নীহার বিন্দু চাকমা বনরুপা রাঙামাটি সদর ও জ্যাকসন চাকমা (২০) পিতা-দেবরঞ্জন চাকমা, নানিয়ারচর উপজেলা, রাঙামাটি।
আটকের পর বরকল বিজিবি জোনে নিয়ে গিয়ে তাদের ব্যাগে তল্লাশী চালিয়ে ১৯টি মোবাইল সেট,৩টি ক্যামেরা,১টি ক্যামেরার ল্যান্সসহ বিভাষ দেওয়ানের কাছ থেকে ১টি সেনাবাহিনীর পোশাক ও সেকেন্ড ল্যাপ্টেন্যান্টের ১টি পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়। বরকল বিজিবি জোনে একদিন একরাত জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদেরকে শুক্রবার রাতে বরকল মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে বিজিবি।
এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে ভূঁয়া সেনা কর্মকর্তা বিভাষ দেওয়ানের কাছ থেকে তার দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের বায়েজিত এলাকায় একটি বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করে। এরা হলেন, জ্ঞান লাল চাকমা (২১) পিতা – বিন্দু কুমার চাকমা হাজাছড়া,বালুখালী সুহেল চাকমা (২৩) পিতা- অজিত কুমার চাকমা চুরাখালী,বাঘাইছড়ি রিটেন চাকমা (২২) পিতা-আনন্দ কুমার চাকমা সার্বোতুলি বাঘাইছড়ি,স্মৃতি বিকাশ চাকমা পিতা-নীহার কান্তি চাকমা হুমুরো আদরকছড়া বাঘাইছড়ি রাঙামাটি। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি সেনা পোশাক উদ্ধার করা হয়।
তাদেরকে শনিবার রাঙামাটির কোতোয়ালী থানায় সোর্পদ করে র্যাব। আটকৃত ১৬ জনের বিরুদ্ধে বরকল থানায় সরকারী গোপন আইনের ১৯২৩এর ৬এর১(ক)/৯ তৎসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫এর ১(ক) ধারা-১৪১/১৭১দঃবিঃ মামলা রুজু করা হয়েছে।
এদিকে আটক ভূঁয়া সেনা কর্মকর্তা বিভাষ দেওয়ান ও তার সঙ্গী ৩ বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সরকারী গোপন আইনে বরকল থানায় মামলা দায়ের পর শনিবার তাদের আদালতে তোলা হয়। এতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আটককৃতদের হাজির করা করে পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন কবিরের আদালত রোববার মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করে আটককৃতদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন বলে বরকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নীলু কান্তি বড়ুয়া জানান।
বিজিবি’র বরকল জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মোঃ আলাউদ্দিন আল মামুন জানান, আটককৃতরা বরকল সদরের শীর্ষ পাহাড় এসএস টিলায় (ফালিট্যাংঙা চুগ) যায়। তাদের মধ্যে থেকে একজন সেনাবাহিনীর ল্যাপ্টেন্যান্ট পরিচয় দেয়। এতে কথাবার্তার মধ্যে সন্দেহ হলে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তথ্যে পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে বিজিবির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.