আলোচিত রেল কেলেঙ্কারীর দুদকের মামলায় খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের তিন প্রভাষক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তিন প্রভাষককে স্ব-স্ব চাকুরী হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জহিরুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক তপন কুমার বিশ্বাস ও সাবেক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মো. আব্দুল ওয়াদুদ ভূঞা। যা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত আদেশটি ৬ এপ্রিল তারিখ উল্লেখ করে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের আদেশে প্রভাষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মো. আব্দুল ওয়াদুদ ভূঞা সমতল জেলায় বদলি হলেও খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রকাশিত অফিস আদেশ উল্লেখ করা হয়, রেল কেলেঙ্কারীর পাহাড়ের এ তিন প্রভাষকের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সনের দুর্ণীতি প্রতিরোধ আইনের ৫/২ ধারায় কোতয়ালী (চট্টগ্রাম) থানার চার্জশীট নং-৫৩৩ বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হলে মাউশি অধিদপ্তরের আইন শাখার আইন উপদেষ্ঠার মতামত নেয়া হয়। আইন উপদেষ্ঠার মতামতনুযায়ী চার্জশীট দাখিলের তারিখ ২০১৪ সনের ১৪ অক্টোবর হতে চার্জশীট ভূক্ত খাগড়াছড়ির এ তিন প্রভাষকের সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রদান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, দুদকের দায়ের করা অবৈধ নিয়োগ দুর্নীতির মামলা থেকে ইতোমধ্যে রেলওয়ের চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা পাঁচটি মামলা থেকেই অব্যাহতি পেয়েছেন। তবে, রেলওয়ের সিআরবি চট্টগ্রামের সিনিয়র ওয়েল ফেয়ার অফিসার (সাময়িক বরখাস্তকৃত) গোলাম কিবরিয়া, অতিরিক্ত প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিজিপি ওয়াই লোকো সেডের সহকারী লোকো মাস্টার (এএলএম গ্রেড-২) গোলাম রহমান, খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) মো. আব্দুল ওয়াদুদ ভূঞা, হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক জহিরুল ইসলাম ও একই প্রতিষ্ঠানের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক তপন কুমার দাসসহ ৩২ জনকে এ মামলায় চূড়ান্তভাবে অভিযুক্ত করা হয়। যা দুদকের সহকারী পরিচালক এসএম রাশেদুর রেজা নিয়োগ দুর্নীতির এ মামলাগুলো তদন্ত করেন।
দুদক সূত্র জানায়, লোকো মাস্টার ও সহকারী লোকো মাস্টার নিয়োগের জন্য বিভাগীয় প্রধানের মতামত ছাড়াই পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়। ওই কমিটি জেলা ভিত্তিক উত্তীর্ণ প্রার্থীর তালিকা না করে সব জেলার প্রার্থীদের একত্রে তালিকা তৈরি করা হয়। ফলে ২৮ জেলা থেকে ৩২ জন প্রার্থী কম নেওয়া হয়। আর নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৯টি জেলা থেকে ওই ৩২ পদ পূরণ করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, প্রার্থীদের উত্তরপত্রে মূল্যায়নকারী শিক্ষকের সই ছিল না। অকৃতকার্য প্রার্থীর উত্তরপত্রে কাটাকাটি করে ২০ বা এর বেশি নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ নম্বর গ্রেস দিয়ে ৩৯ জনের মধ্যে ২৪ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় পাস দেখিয়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। একইভাবে ৩৮ জন প্রার্থীকে গ্রেস না দিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় কম নম্বর দিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজসে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ অনিয়ম করেছে বলে কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, রেলওয়ের সিআরবি চট্টগ্রামের সিনিয়র ওয়েল ফেয়ার অফিসার ও সদস্য সচিব (সাময়িক বরখাস্তকৃত) গোলাম কিবরিয়ার যোগসাজসেই পাহাড়ের এতিন প্রভাষক রেলওয়ের নিয়োগ কেলেঙ্কারীতে জড়িত হয়। পূর্ব রেলের নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে রেলের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, পূর্বাঞ্চল রেলের ৬টি ক্যাটাগরির এক হাজারের বেশি পদে মোটা অংকের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এদিকে, খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজ সূত্র জানায়, অভিযুক্ত প্রভাষকরা চলমান এইচ.এস.সি পরীক্ষা কমিটিতে সাময়িক বরখাস্তের আদেশের পরও চলমান এইচ.এস.সি পরীক্ষা কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন। তন্মধ্যে প্রভাষক জহিরুল ইসলাম পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক ও প্রভাষক তপন কুমার দাশ সদস্য দায়িত্ব পালন করে। তবে অপর প্রভাষক মো. আব্দুল ওয়াদুদ ভূঞা বদলি হয়ে সমতল জেলায় কর্মরত রয়েছেন বলে সূত্র জানায়।
এবিষয়ে প্রভাষক জহিরুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরিক্ষার খাতা দেখেছি। আমরা তিন জনে এক সপ্তাহে প্রায় ১৮’শ খাতা মূল্যায়ন করেছি। তবে কেন আমাদের জড়িত করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। এছাড়াও আমাকে দুদুকের অন্য ৪টি মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কাজী মো. তাজুল ইসলাম জানান, বরখাস্তের আদেশ পেয়েছি। কলেজে এমনিতেই শিক্ষক সংকট তার মধ্যে দুই প্রভাষকের সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার ঘটনায় পাঠদানে মারাত্বক ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
অভিযুক্ত প্রভাষকদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১৬৬/১৬৭/৪২০/৪৭৭(ক)/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটির চার্জশিট বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হয়।
উল্লেখ্য, রেল কেলেঙ্কারীতের পার্বত্য চট্টগ্রামের এ তিন প্রভাষক জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শিক্ষক মহলে বইছে নানা গুঞ্জণ। তবে সচেতনরা মনে করেন, রেলের কালো বিড়াল এই কেলেঙ্কারীতে অব্যাহতি পেলেও তার থাবায় পাহাড়ের তিন প্রভাষকের সম্পৃক্ততার ঘটনায় শিক্ষা ব্যবস্থায় কলংকের দাগ লেগেছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.