সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছেড়ে অবশেষে বান্দরবানের ম্রো ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি) স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। বৃহস্পতিবার আলীকদম উপজেলার দুর্গম কুরুকপাতা বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্রো এমএনপি’র্র ৭৮ জন সদস্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অস্ত্র সর্মপণ করবেন বলে জানা গেছে।
একাধিক সূত্র জানায়,বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আলীকদম উপজেলার দুর্গম কুরুকপাতা বাজারে অস্ত্র সর্মপণে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংএমপি। এছাড়া সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের জিওসি, বান্দরবানের ব্রিগেড কমান্ডার, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ম্রো নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এমএনপি দুটি গ্রুপের একটিতে লাহোপ ম্রো গ্রুপের ১৪ জন, অন্যটি মেনরুম ম্রো গ্রুপের ৬৪ জন মোট ৭৮ জন ম্রো যুবক অস্ত্র সর্মপণ অনুষ্ঠানে অস্ত্র সমর্পন করবেন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য নগদ অর্থসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে তাদের। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ যৌথভাবে আর্থিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। এমএনপি দুটি গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করবেন বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা। ম্রো যুবকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সেনাবাহিনী ও কয়েকজন ম্রো নেতা ভূমিকা ছিল বলে সূত্র জানায়।
সূত্র মতে, এমএনপি’র সংগঠনটি গঠনে প্রথম পর্যায়ে তাদের লক্ষ্য ছিল ম্রো জাতির উন্নয়ন। শিক্ষা, অর্থনৈতিক, সামাজিক দিক থেকে ম্রোদের উন্নয়ন। ২০০৭ সালে কয়েকজন ম্রো যুবক নিয়ে সংগঠনটি গঠিত হয়। গঠন করা হলেও সংগঠনটির আত্বপ্রকাশ ঘটেনি। যে উদ্দেশ্যে সংগঠনটি গঠন করা হয়েছিল সেই লক্ষ্য উদ্দেশ্য থেকে সরে আসে দলের সদস্যরা। শুরু করে চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনা। ২০১২ সালে দিকে আলীকদমের দুর্গম কুরুকপাতা এলাকায় সংগঠনটির ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়। সংগঠনটির ভেতরে দ্বন্দ্বের কারণে ওই বছর ৫ এপ্রিল এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মেনরুম ম্রো প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান। একই বছর ৭ জুন পালে ম্রো প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান। ওই বছর সংগঠনটির প্রধানের দায়িত্ব নেওয়া মেনচিং ম্রো সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। মেনচিং ম্রো গ্রেফতারের পর তাঁর ছেলে মেনরুম ম্রো সংগঠনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সংগঠনটির মধ্যে দ্বন্দ্বে কারণে দল থেকে বের হয়ে লাহোপ ম্রো আরো একটি গ্রুপ সৃষ্টি করে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে কুরুক পাতা বাজারে যাওয়ার সময় এক বাঙ্গালী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়। কথিত রয়েছে ওই ব্যবসায়ী পরিবারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে অপহরণের সঙ্গে এমএনপি সদস্যরা জড়িত থাকলেও কোন গ্রুপের সদস্যরা তাকে অপহরণ করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ম্রো কল্যাণ সংস্থার আলীকদম উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ইয়ংলক ম্রো ও থানছি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ম্রো নেতা খামলাই ম্রো জানান, বিপদগামী ম্রো যুবকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠকে বসতে হয়েছে। ম্রো কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে তাদের বুঝাতে হয়েছে। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহী। বৃহস্পতিবার আলীকদমের কুরুক পাতা বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দেবে এমএনপি দুই গ্রুপের সদস্যরা।
আলীকদম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওত্তেলা রাজু নাহা জানান, বৃহস্পতিবার কুরুকপাতা বাজারে এমএনপি সদস্যরা অস্ত্র সমর্পণ করবে এমন কথা শুনেছি। সংগঠনের সদস্যরা অপহরণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। বিপদগামী ম্রো যুবকরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলে এলাকায় শান্তি বিরাজ করবে বলে তিনি আশাবাদী।
থানচি উপজলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বকুলী মার্মা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ প্রকৃয়াটির বিষয়ে শুনে আসছি। অবশেষে বাস্তবায়রেন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্দ্যোগ। আমি আশা করি পথহারা এসব ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরে আসবে এবং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পরিবার পরিজনদের সূখ দুঃখের অংশীদার হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.