জগতের সকল প্রানীর প্রতি সুখ-শান্তি ও মঙ্গল এবং সকল মানুষের সুভ্রাতৃত্ব কামনা করে রাঙামাটি রাজবন বিহারের দুদিন ব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব শুক্রবার সমাপ্ত হয়েছে।
রাঙামাটির রাজ বন বিহার প্রাঙ্গনে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনকারী পূর্নার্থীদের উদ্দেশ্য ধর্ম দেশনা দেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, বৃগু মহাস্থবির ও জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন রাঙামাটি আসনের সাংসদ উষাতন তালুকদার, চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া ও চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে রাখেন রাঙামাটি রাজ বন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি গৌতম দেওয়ান। এসময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত পার্বত্য ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হক, জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান,সেনা বাহিনীর রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লে:কর্নেল মালিক শামস্ উদ্দীন মঈন, জেলা সিভিল সার্জন ডা.স্নেহ কান্তি চাকমা, সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, রাঙামাটি পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম ভুট্টো,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, চিংকিউ রোয়াজা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দীপেন দেওয়ানসহ বিশিষ্টবর্গ।
অনুষ্ঠান শুরুতে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশ করা হয়। এরপর ভিক্ষু-সংঘের উদ্দেশ্য চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় পঞ্চলশীল প্রার্থনা করেন। এতে পঞ্চশীল, অষ্টশীল ,বৌদ্ধ মূর্তি ও কঠিন চীবর উৎস্বর্গের পর মহাপূর্নবর্তী বিশাখা প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকৃত কঠিন চীবর চাকমা রাজা রাজ বন বিহারের প্রধানের উদ্দেশ্য প্রদান করেন। এর আগে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকৃত কঠিন চীবর ও মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত রাজ বন বিহারের অধ্যক্ষ সাধনানন্দ মহাস্থবির(বন ভান্তে) প্রতিমূর্তি মঞ্চে নিয়ে প্রধান আসনে বসানো হয়। অনুষ্ঠান শেষে বনভান্তের রেকর্ডকৃত ধর্মদেশনা বাজানো হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের পাঠানো চীবর ও শুভেচ্ছা পত্র ভিক্ষু-সংঘের উদ্দেশ্য প্রদান করেন জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক দীপন তালুকদার। এ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও কয়েকটি দেশের বৌদ্ধ পূর্নার্থীসহ হাজারো ধর্ম প্রাণ নর-নারী অংশ নেন।
রাঙামাটি রাজ বন বিহারের ভিক্ষু-সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির কৌশল কর্ম, সৎ চেতনা ও সৎ জীবন নিয়ে জীবনযাপন করার হিতোপদেশ দেন।
রাঙামাটি আসনের সাংসদ উষাতন তালুকদার বাংলাদেশ সরকার সত্যিকার অর্থে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হয়ে থাকে এবং বহু ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি বৈশিষ্ট্যময় দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে আদর্শ ও সমৃদ্ধি লাভ করতে চাই তাহলে অচিরেই পার্বত্য চুক্তির পূর্নাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
ধর্মীয় সভায় চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত বনভান্তে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। বনভান্তের নেতৃত্বে বুদ্ধের আড়াই বছর পূর্বে মহাপূর্নবর্তী বিশাখা প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে কঠিন চীবর তৈরীর প্রবর্তন করাসহ নতুন রীতিনীতি সৃষ্টি করে গেছেন। তিনি বলেন, এ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জুমিয়াদের জুমে উৎপাদিত তুলা থেকে সূতা ও বেইনের সংস্কৃতি-কৃষ্টি রক্ষা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত,রাজ বন বিহার পাশে অবস্থিত ৪২তম কঠিন চীবর দানোৎসবের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে চরকা সূতা কাটা থেকে কাপড় তৈরীর জন্য বেইন ঘর উদ্ধোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। চরকায় তুলা থেকে সূতা কাটার উদ্ধোধন করেন রানী ইয়েন ইয়েন। বেইন ঘরে আগত পুর্নার্থীদের উদ্দেশ্য পঞ্চশীল প্রদান করেন রাঙামাটি রাজ বন বিহারের ভিক্ষু-সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.