শনিবার রাঙামাটিতে ঈদ পুর্ণমিলনী এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলামের আহ্বান শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্য নিবার্হী সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, জঙ্গিরা দেশ ও জাতির শত্রু ,তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম কিন্তু এই ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি গোষ্ঠি পায়তারা করছে।
তিনি আরো বলেন,জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে ইসলাম কোন দিনই সমর্থন করেনি, করবে না। যারা দেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে এবং দেশের উন্নতিতে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে তারা দেশ ও জাতির শত্রু, তাদেরকে মুসলমান বলা যাবে না।
জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জেলা শাখার উদ্যোগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্ধোধক ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু। জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, রাঙামাটি পৌর সভার প্যানেল মেয়র জামাল উদ্দীন, ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান রানা।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রধান কার্যালয়ের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুমিল্লার মাষ্টার ট্রেইনার মাওলানা মোঃ নোমান আলমগীর, ঢাকা ইমাম প্রশিক্ষক একাডেমীর ধর্মীয় প্রশিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ জাকির হোসেন। রাঙামাটির ইমামদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জাতীয় খতিব কাউন্সিল সভাপতি ক্বারী মাওলানা মোহাম্মদ ওসমান গণি চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক সরকার সরোয়ার আলম।
উদ্বোধকের বক্তব্যে ফিরোজা বেগম চিনু এমপি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সাথে ইসলামের কোন সর্ম্পক নেই। ইসলাম ও জঙ্গীবাদ এক নয়। যারা জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত আছে তাদের কোন ধর্ম থাকতে পারে না।
সন্তানের প্রতি অভিবাবকের সঠিক নজর রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, অভিবাবকদেরকে সন্তানের প্রতি নজর রাখতে হবে। সন্তান যাতে ভুল পথে না যায় তার জন্য অভিবাবককে সচেতন হতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি রাঙামাটিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদের মূল উৎপাটনের আহবান জানিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে সন্ত্রাস জঙ্গিদের কোন আস্তানা গড়ে তুলতে না পারে সেজন্য সবাইকে দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানান।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্য নিবার্হী সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন ‘মওদুদীর ইসলাম আর মদিনার ইসলামের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, মওদুদীর ইসলামে যদিও হত্যা করা ভালো কিন্তু মদিনার ইসলাম হত্যা করা পাপ। এখন ভাবনার বিষয় আমরা কোন ইসলাম নিবো। মদিনার ইসলাম না কি ভুল মনগড়া মওদতীর ইসলাম।
তিনি যুব সমাজকে সঠিক ইসলাম চর্চার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যুব সমাজ হচ্ছে আমাদের দেশের মূল শক্তি। তাই এদেরকে ভুল মতবাদ দিয়ে জঙ্গির পথে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এর থেকে মুক্তির জন্য আমাদের যুব সমাজকে ইসলামের সঠিক পথ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে এবং দেখিয়ে দিতে হবে মদিনার ইসলামকে। তবেই দেশে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস কমবে এবং দেশ আরো উন্নত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন বলেন, ইসলাম সকলের জন্য শান্তির কথা বলে। ইসলামে জঙ্গী ও সন্ত্রাস নামে কোন কিছু নেই। এসব ইসলাম সমর্থন করে না। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখা যায় লেখা হয় ইসলামি জঙ্গি সংগঠন বা সন্ত্রাসী সংগঠন, ইসলাম যেখানে জঙ্গি ও সন্ত্রাস সমর্থন করে না সেখানে এসব লেখা ঠিক নয়। তাই তিনি এসব না লেখার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি যুব সমাজকে এসব কাজ থেকে দূরে থেকে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, ফসাদ ও ফিদনা না করার জন্য বিশ^ নবী নিজেই বলেছেন। কিন্তু যারা এ কথা উপেক্ষা করে বিশে^র মাঝে ফিদনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন তারা মুসলমান হতে পারে না। যদি মুসলমানই হতেন তবে রাসূলের এ বাণীকে তারা ভুলে যেতে পারতো না।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ পাক তার রাসূলকে পাঠিয়েছেন আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন কেমন ধর্ম পালন করতে হবে। এছাড়া জীবনের পূণাঙ্গ বিধান নামে পরিচিত আল-কোরআন আমাদেরকে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আজ আমরা এই কোরআন ও রাসূলের বাণী রিসার্স করছি না বলে ভুল পথে যাত্রা করছি। তাই সকলের প্রয়োজন এই কোরআন ও রাসূলের বাণীগুলোকে রিসার্স করা।
তিনি রাঙামাটিতে এমন কোন ঘটনা না হওয়ার জন্য প্রশাসন সব সময় সর্তক রয়েছে উল্লেখ রাঙামাটির কোন স্থানে যদি এমন কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে প্রশাসনকে জানানোর জন্য তিনি আহ্বান করেন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, রাঙামাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন সন্ত্রাস মোকাবেলাই বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজে ধর্মীয় গুরু বা ধর্মীয় নেতাদের কথা দেশে সকল স্থরের মানুষ বিশ্বাসের সাথে শ্রবণ করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে একমাত্র ধর্মীয় নেতারা। বক্তারা,প্রতিটি জুম্মার দিন খুতবার সাথে জঙ্গিবিরোধী বয়ান দেওয়ার জন্য ধর্মীয় নেতাদের আহবান জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.